একটি আদর্শ গবেষণা প্রস্তাবনার নমুনা

Image result for গবেষণা প্রস্তাবনা নমুনা






একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময়ে বাংলাদেশের মূলধারার সংবাদপত্রে সংখ্যালঘুদের উপস্থাপন বিশ্লেষণ’ 


অধ্যায় ১ঃ ভূমিকা

সংখ্যালঘু নির্যাতন এখন বাংলাদেশে নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে কখনও সম্পত্তির লোভে, কখনও ধর্মীয় ও মনস্তাত্ত্বিক কারণে, আবার কখনও ব্যক্তিগত শত্রুতার জের ধরে, আবার গুজবের কারণেও ঘটছে নির্যাতনের ঘটনা আমাদের দেশে বিশেষ করে নির্বাচনের সময়ে সংখ্যালঘুদের উপরে অত্যাচারের মাত্রা বেড়ে যায়। প্রতিদিন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কিংবা মূলধারার মিডিয়ায় এসব সংবাদ দেখতে পাওয়া যায় Friendan এর মতে, ‘‘সংবাদপত্র সমাজের দর্পণ ও মানুষের মানচিত্র হিসেবে একটি জাতির সঠিক পরিচয় বহন করে’’ (চৌধুরী, ২০১১) সংখ্যালঘুরাও আমাদের সমাজের অবিচ্ছেদ্য অংশ সমাজের দর্পণ হিসেবে সংবাদপত্র সংখ্যালঘুদের সঠিকভাবে চিহ্নিত করে কিনা সেটা জানা জরুরি তবে তাদের সম্পর্কিত সংবাদ সংবাদপত্রে বিশেষ করে নির্বাচনের সময়ে কিভাবে প্রকাশিত হয়, আর যা প্রকাশিত হয় তা তাদের সমস্যাগুলোকে ঠিকভাবে তুলে ধরে কিনা অথবা তারা নিজেদের কিভাবে দেখতে চায়, আর এইসব লেখা তাদের উপর কিরূপ প্রভাব পড়ে তা খতিয়ে দেখা দরকার তাছাড়া দেখা যাচ্ছে, বর্তমানে বিভিন্ন সংবাদপত্র সংখ্যালঘু বিষয়ক সংবাদ প্রকাশ করছে। তারপরেও সংখ্যালঘুরা তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। লুণ্ঠন, মারামারি, ধর্ষণ বন্ধ হয় নি। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময়ে সংখ্যালঘু সংক্রান্ত সংবাদগুলো কিভাবে প্রতিফলিত হচ্ছে তা খতিয়ে দেখা হবে এই গবেষণায়।

১.১ গবেষণার প্রেক্ষাপট
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে বহুল আলোচিত ইস্যুটি হচ্ছে মিয়ানমারের সংখ্যালঘু ‘রোহিঙ্গা সংকট’ তাদেরকে আশ্রয় দিয়ে আমরা মানবিকতা দেখালেও আমাদের নিজ দেশের সংখ্যালঘুরাই নিরাপদ নয় এদেশেএদেশের মিডিয়াগুলো রোহিঙ্গা সংকটের বেলায় যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে সংবাদ প্রচার করলেও সংখ্যালঘু সংকটের সময়ে উদাসীনতার পরিচয় দিচ্ছে। এর পেছনে কি কারণ রয়েছে তা জানা জরুরি।
বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নিয়ে কিছু বই বের হলেও এটি নিয়ে গবেষণা কম। বিশেষ করে মিডিয়া ও সংখ্যালঘু নিয়ে গবেষণা কম। ২০১৫ সালে প্রেস ইন্সটিটিউট অব বাংলাদেশ থেকে মিডিয়া ও সাম্প্রদায়িকতা নিয়ে একটি বই বের হয়েছে। সেখানে মিডিয়াতে সংখ্যালঘুদের কিভাবে উপস্থাপন করে তা নিয়ে কিছুটা আলোচনা করা হয়েছে। তাছাড়া মোহাম্মদ রাশেদুল হাসান ২০১৪ সালের নির্বাচনের সময়ে কিভাবে সংখ্যালঘুদের উপস্থাপন করা হয়েছে তা কিছুটা আলোচনা করা হলেও তার সামগ্রিক চিত্র ফুটে ওঠে নি। আর এজন্যই আমার এই গবেষণার প্রয়াস।

মূলধারার সংবাদপত্র বলতে যেসব দৈনিক মুদ্রণ সংবাদপত্র প্রচার সংখ্যার দিক থেকে বহুল প্রচারিত এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ পড়ে সেগুলোকে বিবেচনা করা হবে। সংখ্যালঘু সংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশে রাজনীতি, ধর্ম এবং মালিকানা প্রভাব ফেলে। তারা তাদের রাজনৈতিক এবং ব্যবসায়িক স্বার্থে সংবাদ প্রচার করে। এসব বিষয়কে মাথায় রেখেই উদ্দেশ্যমূলক নমুনায়নের মাধ্যমে ঢাকা থেকে প্রকাশিত প্রচার সংখ্যার দিক থেকে শীর্ষস্থানীয় তিনটি বাংলা ও দুটি ইংরেজিসহ মোট পাঁচটি দৈনিক পত্রিকা নির্বাচন করা হয়েছে। পত্রিকাগুলো হলোঃ দৈনিক প্রথম আলো, দৈনিক জনকণ্ঠ, দৈনিক নয়া দিগন্ত, দ্য ডেইলি স্টার ও দ্য ডেইলি নিউ এইজ। এই সংবাদপত্রগুলোতে ২০১৮ সালের ১ ডিসেম্বর থেকে ২০১৯ সালের জানুয়ারির ১৫ তারিখ পর্যন্ত প্রকাশিত সংখ্যালঘু বিষয়ক সংবাদের আধেয় বিশ্লেষণ করা হবে।

১.২ গবেষণার ধারণাসমূহ
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনঃ
একাদশ জাতীয় নির্বাচন বলতে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের ৩০ তারিখ অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনকে বোঝাবে।
সংখালঘুঃ
সংখ্যালঘু হচ্ছে ধর্মীয়, জাতিগত, বর্ণগত সুবিধা বঞ্চিত জনগোষ্ঠী।
মূলধারার সংবাদপত্রঃ মূলধারার সংবাদপত্র বলতে মুদ্রণ মাধ্যমকে বোঝাবে।

১.৩ গবেষণা প্রশ্ন
যে কোন গবেষণা পরিচালনা করতে পূর্বে করা হয় নি এমন কোন আঙ্গিক নিয়ে কাজ করতে হয় সেই আঙ্গিকের উপর ভিত্তি করে মূল প্রশ্নকে সামনে রেখে কতগুলো প্রশ্নের আলোকে গবেষণাটি পরিচালিত করতে হয় গবেষণাটি পরিচালনা করার সময় অবশ্যই এই প্রশ্নগুলোর উত্তর বের করে আনতে হয় এই গবেষণাটিও কতগুলো প্রশ্নের আলোকে পরিচালিত হবে প্রশ্নগুলো হলোঃ
.নির্বাচনের সময়ে সংখ্যালঘু সংক্রান্ত কোন কোন বিষয়গুলো পত্রিকাতে বেশি আসে?
২. সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতনের সংবাদ কেমন আসে?
. সংখ্যালঘু বিষয়ক সংবাদ প্রকাশে বাংলা এবং ইংরেজি পত্রিকা ভেদে সংবাদ উপস্থাপনে কোন তারতম্য হচ্ছে কিনা?

১.৪ গবেষণার উদ্দেশ্য

বাংলাদেশে সংখ্যালঘুরা নিপীড়নের শিকার হচ্ছে কখনও রাজনৈতিক কারণে, কখনও জমিজমা নিয়ে বিরোধের কারণে, আবার ব্যক্তিগত শত্রুতার জের ধরেও তারা এদেশে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে দেশ ছাড়তেও বাধ্য হচ্ছে মৌলিক নাগরিক অধিকার তারা পাচ্ছে না এসব বিষয়গুলো বাংলাদেশের সংবাদপত্রে কিভাবে ওঠে আসছে তা অনুসন্ধান করাই এই গবেষণার মূল লক্ষ্য

এদেশের সংবাদপত্রগুলোতে সংখ্যালঘু বিষয়ক সংবাদ বেশি আসে না আবার অনেক সংবাদপত্র সংখ্যালঘু বিষয়টি নিয়ে রাজনীতি করে তাদের নিয়ে নেতিবাচক সংবাদ প্রকাশ করে সাম্প্রদায়িকতাকে উস্কে দেয় প্রখ্যাত সাংবাদিক টমাস কামিলিন্ডি এসব মিডিয়াকেহেইট মিডিয়াবলেছেন বিশেষ করে পঁচাত্তর পরবর্তী সামরিক শাসনের সময়ে অনেক বেশি সাম্প্রদায়িক সংবাদ প্রচার করা হতো ১৯৯০ সালে দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকা ভারতের বাবরি মসজিদ ভাঙা নিয়ে মিথ্যা সংবাদ প্রচার করে যার ফলে বাংলাদেশে অনেক মন্দির ভাঙা হয় এবং হিন্দুদের বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয়া হয় ২০১৩ সালে ২৫ ফেব্রুয়ারি দৈনিক ইনকিলাবে ‘‘ইমাম ও মাদরাসার প্রিন্সিপালদের থানায় ডেকে নিয়ে নাস্তিকদের বিরোধিতা না করতে হুমকি’’ শিরোনামে সংবাদে বলা হয় দেশব্যাপী নাস্তিকদের রক্ষার জন্য মুসলমানদের নিপীড়ন করছে সরকার এছাড়াও ৮ জানুয়ারি আমার দেশ ‘‘ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মুসলিমরা নির্মম নির্যাতনের শিকারঃ ঢাকায় আশ্রয় নিয়েও রেহাই মিলছে না’’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করে এতে বলা হয় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর খ্রিস্টান সদস্যরা পুলিশের সাহায্যে মুসলমানদের ধরে নিয়ে নির্যাতন করছে এসব মিডিয়াগুলো মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিকে কাজে লাগিয়ে সাম্প্রদায়িকতা ছড়িয়ে দিচ্ছে সাম্প্রদায়িকতা ছড়াতে মিডিয়া কী ভূমিকা পালন করে তা এই গবেষণায় দেখা হবে অন্যান্য মানুষের সাথে সংখ্যালঘুদের বিচ্ছিন্নতা সৃষ্টিতে সংবাদপত্র কী ভূমিকা পালন করছে তা খতিয়ে দেখা হবে

আবার অনেক মিডিয়ায় তাদের আন্দোলন-সংগ্রাম, তাদের উপর নিপীড়ন, তাদের দাবি-দাওয়া নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করলেও তার পরিমাণ অনেক কম সংখ্যালঘুদের মাসিক পত্রিকাদলিতকণ্ঠ’, ‘পরিষদ বার্তাপ্রভৃতিতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের সংখ্যালঘু-দলিত সম্প্রদায়ের দাবি-দাওয়া, তাদের উপর অত্যাচার-নির্যাতনের সংবাদ প্রকাশিত হয় কিন্তু মূলধারার সংবাদপত্র তার অনেক কিছুই প্রকাশ করে না এসব বিষয়গুলো কেন প্রচার করে না বা করলেও কতটুকু করে তা অনুসন্ধান করা হবে আর প্রকাশিত সংবাদের  আন্দোলন, নির্যাতন, উৎসব প্রভৃতি বিষয়ভিত্তিক শেণিবিন্যাস করে দেখা হবে কোন সংবাদ কেমন প্রচারিত হয়
এছাড়াও সংখ্যালঘুদের অধিকার আদায়ে সংবাদপত্রের ভূমিকা কেমন, সংখ্যালঘুদের উপর সহিংসতার সময়ের চিত্র কতটুকু প্রতিফলিত হয় তা মূল্যায়ন করা হবে সর্বোপরি, সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষায় এবং আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক উন্নয়নে গণমাধ্যমের যথাযথ ভূমিকা নিশ্চিতকরণে সুপারিশ ও দিকনির্দেশনা পেতে এই গবেষণাটি পরিচালিত হবে

১.৫ গবেষণার যৌক্তিকতা
জাতিগত বৈষম্য, শোষণ, বঞ্চনা থেকে মুক্তির জন্য বাঙ্গালি-পাহাড়ী, হিন্দু-মুসলিম সবাই মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল। সবাই আশা করেছিল শোষণহীন অসাম্প্রদায়িক সমাজ প্রতিষ্ঠিত হবে। কিন্তু বাস্তবতা তার সম্পূর্ণ বিপরীত। বিভিন্ন মহল থেকে অসাম্প্রদায়িক দেশ বলে দাবি করা হলেও তা কেবল মুখের বুলির মধ্যেই সীমাবদ্ধ। শোষণ থেকে মুক্তি পাওয়ার পর আমরাই এখন নির্যাতন করছি সংখ্যালঘুদের
বাংলাদেশের সংবিধানের অন্যতম মূলনীতি হল সমাজতন্ত্র এবং ধর্মনিরপেক্ষতা। সংবিধানের ১২ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে ধর্মনিরপেক্ষতা নীতি বাস্তবায়নের জন্য-
(ক) সর্ব প্রকার সাম্প্রদায়িকতা,
(খ) রাষ্ট্র কর্তৃক কোন ধর্মকে রাজনৈতিক মর্যাদা দান,
(গ) রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ধর্মীয় অপব্যবহার,
(ঘ) কোন বিশেষ ধর্ম পালনকারী ব্যক্তির প্রতি বৈষম্য বা তাহার উপর নিপীড়ন, বিলোপ করা হইবে।

তাছাড়াও সংবিধানের ২৮ নং অনুচ্ছেদে কেবল ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারীপুরুষভেদে বা জন্মস্থানের কারণে কোন নাগরিকের প্রতি রাষ্ট্র বৈষম্য প্রদর্শন করবে না বলে নিশ্চয়তা দিয়েছে। সংবিধানে তাদের অধিকারের ব্যাপারটি স্বীকৃতি দেওয়ার পরেও তারা নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সংখ্যালঘু অধিকার নিয়ে ভ্লাদিমির ইলিচ লেনিন বলেন, ‘‘একটি রাষ্ট্রে কেবল একজন মানুষও যদি থাকেন যার জাতিগত বা ভাষাগত পরিচয় ভিন্ন, তারও অধিকারের বিষয়টি রাষ্ট্রকে নিশ্চিত করতে হবে’’ (ফেরদৌস, ২০১৩, পৃষ্ঠা ৩৬)এখন রাষ্ট্র সঠিকভাবে তাদের অধিকার নিশ্চিত করছে কিনা সেটা গণমাধ্যমকে দেখতে হবে। বিশেষ করে সংখ্যালঘুদের অধিকার লঙ্ঘনের বা তাদের উপর নির্যাতনের চিত্র যদি গণমাধ্যমে সঠিকভাবে আসে তাহলে সরকারের উপরে চাপ সৃষ্টি করা যাবে তাদের ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে।

সাম্প্রতিক সময়ে সংখ্যালঘুদের উপর সবচেয়ে বড় সহিংসতা চালানো হয় ২০১২ সালে কক্সবাজারের রামুতে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের উপর এরপর ২০১৬ সালের অক্টোবরে বাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে হিন্দুদের বাড়িঘর লুটপাটসহ মন্দিরে প্রতিমা ভাঙচুর করা হয়। নিপীড়ন-নির্যাতন এবং অনিরাপত্তাজনিত কারণে তারা বিভিন্ন সময়ে দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছে২০১৮ সালের ১৭ নভেম্বর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘জাতীয় নির্বাচনঃ সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা’ শীর্ষক মতবিনিময় সভার মূল প্রবন্ধে উল্লেখ করা হয় আসন্ন নির্বাচনে সহিংসতার হাত থেকে বাঁচার জন্য অনেকে দেশ ছেড়েছেন, আবার অনেকে দেশ ছাড়ার প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন। এতে এদেশের সংখ্যালঘুদের দেশ ত্যাগের চিত্র তুলে ধরা হয়। সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ১৯৫১ সালে মোট জনসংখ্যার ২৩ ভাগ ছিল। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে ১৯৭৪ সালে ছিল ১৩.৫ ভাগ, ২০০১ সালে সেই সংখ্যা ৯.৫ ভাগ। আর এখন সেই সংখ্যা ৮ ভাগের নিচে (দৈনিক প্রথম আলো, ১৭ নভেম্বর ২০১৮)এই যে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় এত কমে যাচ্ছে এসব বিষয়গুলো গণমাধ্যমে কিভাবে প্রকাশিত হয় তা জানার জন্য এই গবেষণা করা দরকার।

বাংলাদেশের গণমাধ্যমগুলির দিকে তাকালে দেখা যায় যে, এদের অধিকাংশের মালিকানা বিভিন্ন বহুজাতিক কোম্পানির হাতে আর এজন্যই মূলধারার গণমাধ্যম ধনিক, কর্পোরেট পুঁজি অভিমুখীন তারা গণমাধ্যমকে ব্যবহার করে আধিপত্যবাদী শাসন ব্যবস্থা চালু রাখে সবার মাঝে ছড়িয়ে দেয় তাদের পুঁজিবাদী মতাদর্শ আর একারণে সমাজের প্রান্তিক মানুষের খবর ধনিক শ্রেণি নিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যমে বেশি আসে না তবে আশার কথা হচ্ছে সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন অঞ্চলে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের চিত্র গণমাধ্যমগুলো প্রচার করছে আর তাদের এই প্রচার কিভাবে সংখ্যালঘুদের জীবনমান উন্নয়নে সংবাদপত্র ভূমিকা রাখতে পারে তার দিক-নির্দেশনা পাওয়ার জন্য ‘‘একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময়ে বাংলাদেশের মূলধারার সংবাদপত্রে সংখ্যালঘু বিষয়ক সংবাদ উপস্থাপন বিশ্লেষণ’’ শীর্ষক গবেষণাটি সম্পাদন করা জরুরি মনে করি

১.৬ অধ্যায় বিন্যাস
প্রস্তাবিত গবেষণাটির কোন অধ্যায়ে কোন কোন বিষয়গুলো থাকবে তা নিম্নরূপঃ

প্রথম অধ্যায়
প্রথম অধ্যায়ে গবেষণার প্রেক্ষাপট, গবেষণার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য, গবেষণার যৌক্তিকতা নিয়ে আলোচনা করা হবে গবেষণার সাথে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রবন্ধ, আর্টিকেল ও সংশ্লিষ্ট পূর্ববর্তী গবেষণার সাহায্যে প্রাসঙ্গিক সাহিত্য পর্যালোচনা করা হবে পর্যালোচনা শেষে যে দিকটি নিয়ে এখনও কাজ হয় নি তার আলোকে একটি মূল সমস্যাকে নিয়ে গবেষণা প্রশ্নপত্র সাজানো হবে

দ্বিতীয় অধ্যায়
এ অধ্যায়ে গবেষণাটির তাত্ত্বিক কাঠামো এবং গবেষণা পদ্ধতির বর্ণনা থাকবে গবেষণাটি করতে তাত্ত্বিক কাঠামো হিসেবে ফ্রেমিং অ্যানালাইসিস তত্ত্ব ব্যবহৃত হবে এসব তত্ত্ব কেন এবং কিভাবে ব্যবহার করা হবে তা নিয়ে আলোচনা করা হবে আর পদ্ধতি হিসেবে গুণগত পদ্ধতির মাধ্যমে গবেষণাটি পরিচালিত হবে। তথ্য সংগ্রহ ও উপস্থাপনের পদ্ধতি হিসেবে আধেয় বিশ্লেষণ পদ্ধতি কিভাবে ব্যবহার করা হবে তা আলোচনা করা হবে এই অধ্যায়ে

তৃতীয় অধ্যায়
এ অধ্যায়ে গবেষণা করার জন্য গবেষণা প্রশ্নের আলোকে আধেয় বিশ্লেষণ পদ্ধতি ব্যবহার করে বাংলা পত্রিকা দৈনিক প্রথম আলো ও দৈনিক জনকণ্ঠ, দৈনিক নয়া দিগন্ত থেকে প্রাপ্ত তথ্যের উপস্থাপন ও বিশ্লেষণ করা হবে তথ্য বিশ্লেষণের জন্য বিভিন্ন গ্রাফ ব্যবহার করা হবে

চতুর্থ অধ্যায়
গবেষণা প্রশ্নের আলোকে আধেয় বিশ্লেষণ পদ্ধতি ব্যবহার করে ইংরেজি পত্রিকা দ্য ডেইলি স্টার ও দ্য নিউ এইজ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের উপস্থাপন ও বিশ্লেষণ করা হবে এ অধ্যায়ে তথ্য বিশ্লেষণের জন্য বিভিন্ন গ্রাফ ব্যবহার করা হবে

পঞ্চম অধ্যায়
‘একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময়ে বাংলাদেশের মূলধারার সংবাদপত্রে সংখ্যালঘুদের উপস্থাপন বিশ্লেষণশীর্ষক গবেষণায় প্রাপ্ত সম্মিলিত ফলাফল তুলে ধরে বাংলা ও ইংরেজি পত্রিকায় উপস্থাপনের তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরা হবে এ অধ্যায়ে ফলাফল উপস্থাপন ও বিশ্লেষণের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় সুপারিশমালা তুলে ধরা হবে

অধ্যায় ২ঃ তাত্ত্বিক কাঠামো ও পূর্বপাঠ পর্যালোচনা

২.১ তাত্ত্বিক কাঠামো
কোন গবেষণা পরিচালনা করতে নির্দিষ্ট কোন দৃষ্টিকোণ থেকে করতে হয়। রিচার্ড বারসামের মতে, ‘তত্ত্বের আশ্রয় নেয়া অর্থ হলো, বিশেষ কোন বুদ্ধিবৃত্তিক বা আদর্শিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্লেষণ করা’ (ইসলাম, ২০১০)এ গবেষণাটি করতে ফ্রেমিং অ্যানালাইসিস তত্ত্ব ব্যবহৃত হবে।

ফ্রেমিং অ্যানালাইসিস তত্ত্বঃ
কোন ঘটনা বা ইস্যুকে কোন বিশেষ আঙ্গিকে উপস্থাপন করার কৌশলকে কাঠামোকরণ বা ফ্রেমিং বলে। অর্থাৎ ফ্রেমিং হচ্ছে কোন বিষয় নিজস্ব আঙ্গিকে উপস্থাপন করার কৌশল।
Pan & Koisicki (1993) এর মতে, ফ্রেম হচ্ছে অবধারণের জানলা, যেটি দিয়ে কোন ঘটনাকে দেখানো হচ্ছে।

একজন ফটোগ্রাফার যেমন সবকিছু তাঁর ছবিতে তুলে আনেন না, শুধু প্রয়োজনীয় অংশটুকুই ফ্রেমবন্ধি করেন। তেমনি একজন রিপোর্টারও সবকিছু তাঁর সংবাদে আনেন না। শুধু দরকারি জিনিসটিই তাঁর রিপোর্টে তুলে ধরেন। আর এভাবে নির্দিষ্ট জিনিস তুলে ধরার মাধ্যমে এক ধরনের ফ্রেমিং করেন।
গণমাধ্যমের ফ্রেমিং বলতে মূলত গণমাধ্যমের আধেয় বা উৎপাদন উপস্থাপনের কৌশল বা প্রক্রিয়াকে বোঝায় (Goffman, 1974)। গণমাধ্যমের আধেয় উৎপাদন পর্যায় থেকে শুরু করে প্রচার বা সম্প্রচার হওয়া পর্যন্ত নানাভাবে কাঠামোকরণ হয়ে থাকে। আর গণমাধ্যম গবেষণায় ফ্রেমিং বিশ্লেষণ হল কোন একটা ঘটনা বিশেষ আঙ্গিকে থেকে জানার প্রক্রিয়া।

আর এন্টম্যান ফ্রেমিং কে সংজ্ঞায়িত করতে বলেছেন, কোন নির্দিষ্ট দৃষ্টিকোণ থেকে রিয়েলিটিকে উপলব্ধি করা এবং একে বড় করে দেখানোর প্রক্রিয়াকে ফ্রেমিং বলে (Entman 1993).
গণমাধ্যমের প্রভাব গবেষণার ক্ষেত্রে গবেষকরা গণমাধ্যমের তিনটি ক্ষেত্রকে ফ্রেমিং বিশ্লেষণের অন্তর্ভুক্ত করেন। গণমাধ্যমের উৎপাদন, আধেয় এবং অডিয়েন্স পর্যায় ফ্রেমিং বিশ্লেষণের অন্তর্ভুক্ত(Kitzinger, 2007)
গণমাধ্যম আধেয়ের বিশাল অংশ জুড়ে রয়েছে সংবাদ। সংবাদপত্রের আধেয় হিসেবে সংবাদে ফ্রেমিং বিশ্লেষণ অত্যন্ত যুক্তিযুক্ত। সবগবাদপত্র সংবাদের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত সামাজিক বাস্তবতা নির্মাণ করছে। আর এজন্য বিভিন্ন বিষয়ে ফ্রেমিং করছে। সংখ্যালঘু নিয়েও বিভিন্ন গৎবাঁধা ধারণা নির্মাণ করে চলছে। ফ্রেমিং অ্যানালাইসিস তত্ত্বের মাধ্যমে নির্বাচনের সময়ে সংখ্যালঘুদের কিভাবে উপস্থাপন করেছে তা বিশ্লেষণ করা হবে। সংবাদপত্র গণমাধ্যম হিসেবে সংখ্যালঘু ইস্যু নিয়ে মানুষের মধ্যে এজেন্ডা সেট করে দেয়ার জন্য কেমন ধরনের সংবাদ প্রকাশ করে এবং তা মানুষের চিন্তায় কেমন প্রভাব পড়ে তা অনুসন্ধান করা হবে এই তত্ত্ব প্রয়োগ করে।

২.২ পূর্বপাঠ পর্যালোচনা

সংখ্যালঘু সম্প্রদায় বরাবরই তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত। তুচ্ছ বিষয়কে কেন্দ্র করে তাদের উপর নানা রকম হামলা, সহিংসতা চালানো হয়। বিশেষ করে আমাদের দেশে জাতীয় নির্বাচনের সময় তাঁদের উপর অত্যাচারের মাত্রা ছাড়িয়ে যায়। দেশ ছাড়তেও বাধ্য হতে হয় অনেক সময়। কিন্তু মিডিয়াতে তাদের কণ্ঠস্বর অত্যন্ত ক্ষীণ। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের এসব বিষয়গুলো মিডিয়াতে উঠে আসলেও তার পরিমাণ কম। রাজনৈতিক এবং আদর্শগত কারণে তাদেরকে নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করা হয়। ভুল সংবাদ, গৎবাঁধা ধারণা এবং উস্কানিমূলক সংবাদ পরিবেশন করা হয় তাদের নিয়ে। এখানে সংখ্যালঘু বিষয়ক প্রাসঙ্গিক গবেষণা পর্যালোচনা করা হলোঃ


২০১৫ সালে প্রেস ইন্সটিটিউট অব বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত মো. শাহ আলমগীরের সম্পাদনায় ‘‘মিডিয়া ও সাম্প্রদায়িকতা’’ গ্রন্থে বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িকতা সৃষ্টির ইতিহাস, এর পেছনে গণমাধ্যমের দায় ও করণীয় কি তা নিয়ে আলোকপাত করেছেন। শাহরিয়ার কবির ‘বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িকতার ঐতিহাসিক চালচিত্র ও গণমাধ্যম’ শীর্ষক অধ্যায়ে বলেন যে, দেশভাগ ও দ্বি-জাতি তত্ত্ব এদেশের ইতিহাসের ধারা নির্ধারণ করেছে। এদেশে সাম্প্রদায়িকতা সৃষ্টির পেছনে যেমন এদেশের গণমাধ্যমের ভূমিকা আছে, আবার সাম্প্রদায়িকতা মোকাবেলার জন্যও মিডিয়ার ভূমিকা রয়েছে বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িকতার চালচিত্র নির্মাণের প্রধান উপকরণ হচ্ছে সংবাদপত্রে প্রকাশিত সাম্প্রদায়িকতার পক্ষে ও বিপক্ষের সংবাদ, সম্পাদকীয়, উপ-সম্পাদকীয়, কলাম, নিবন্ধ প্রভৃতি। ২০০১ সালে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর নজিরবিহীন অত্যাচার চালানো হলে এদেশের সংবাদপত্রগুলো তা প্রকাশ করেছে। খবরের কাগজে বেরিয়েছে কন্যাকে বাঁচাতে গিয়ে নিহত হয়েছেন পিতা, বৃদ্ধ জ্ঞানতাপসকে মাথায় গুলি করে হত্যা, কিংবা সেই অসহায় মায়ের কথা যিনি দুষ্কৃতকারীদের মিনতি করে বলছেন তাঁর কন্যার বয়স মাত্র ১২, তারা যেন একজন একজন করে আসে। তবে এসময় বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন দেশের বিভিন্ন অঞ্চল সফর করে বলেছে প্রকৃত ঘটনা যা ঘটেছে সংবাদপত্রে তার অর্ধেকও ছাপা হয়নি। সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন বা এ ধরনের যে কোন মানবিক ও সামাজিক দুর্যোগের খবর পত্রিকা প্রকাশ করে এ বিষয়ে সরকারকে ও জনগণকে সচেতন করার জন্য, নির্যাতন বন্ধের জন্য। বাংলাদেশের অধিকাংশ গণমাধ্যম এ ব্যাপারে ইতিবাচক বলে তিনি মনে করেন (আলমগীর, ২০১৫)।

Muhammad Rashedul Hasan নির্বাচনের সময়ে বাংলাদেশের প্রধান দৈনিকগুলো সংখ্যালঘু ইস্যু কিভাবে উপস্থাপন করে তা পরীক্ষা করার জন্য ২০১৪ সালে ‘‘Cover of Minority Issues in The Selected National Dailies During The 10th Parliamentary Election in Bangladesh’’ শীর্ষক গবেষণাটি করেন গবেষণাটি করতে তিনি দৈনিক ইত্তেফাক, জনকণ্ঠ, নয়া দিগন্ত, প্রথম আলো, সমকাল ও ডেইলি স্টার পত্রিকার ৬ থেকে ২০ জানুয়ারি ২০১৪ পর্যন্ত সংবাদ বিশ্লেষণ করেন এ সময়ের মধ্যে মোট ৫০১ টি সংবাদ আইটেম প্রকাশ করে এদের মধ্যে মোট প্রকাশিত সংবাদের মধ্যে দৈনিক জনকণ্ঠ সবচেয়ে বেশি পরিমাণে সংবাদ প্রকাশ করে যা মোট প্রকাশিত সংবাদের ২২% সবচেয়ে কম সংবাদ প্রকাশ করে দৈনিক নয়া দিগন্ত যা মোট সংবাদের ১৩% সংবাদ আইটেমগুলোকে সাদামাটা সংবাদ, ব্যাখ্যামূলক, অনুসন্ধানমূলক, ফিচার ও ছবিসহ সংবাদ ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়েছে নিউজ আইটেমের মধ্যে সাদামাটা নিউজ সবচেয়ে বেশি প্রকাশিত হয়েছে সাদামাটা নিউজ সবচেয়ে বেশি ৯১ টি প্রকাশ করেছে জনকণ্ঠ, কম প্রকাশ করেছে দি ডেইলি স্টার সংখ্যালঘু নিয়ে ফিচার, ব্যাখ্যামূলক ও অনুসন্ধানমূলক সংবাদ সবগুলো পত্রিকাই কম প্রকাশ করেছে এ সময়ের মধ্যে দি ডেইলি স্টার সবচেয়ে বেশি ৪ টি সম্পাদকীয় প্রকাশ করেছে, সবচেয়ে কম ১ টি করে প্রকাশ করেছে দৈনিক জনকণ্ঠ ও দৈনিক সমকাল উপাত্ত বিশ্লেষণ করে লেখক অভিমত দেন যে, উপরের ৬ টি পত্রিকার মধ্যে সংখ্যালঘু ইস্যুতে সবচেয়ে বেশি সংবাদ প্রচার করে দৈনিক জনকণ্ঠ সবচেয়ে কম সংবাদ প্রকাশ করে নয়া দিগন্ত তিনি মনে করেন, নির্বাচনের সময়ে সংখ্যালঘুদের উপর হামলা ঠেকাতে সংবাদপত্র উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও বহুত্ববাদী সমাজ প্রতিষ্ঠায় মিডিয়া সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানকে উৎসাহিত করতে পারে (Hasan, 2014)

Dr. Syeda Rozana Rashid ও Md. Azharul Islam ২০১৩ সালে প্রকাশিত ‘‘The Role Of Media In Influencing Public Opinion On Violence Against Minorities: The Case Study Of Ramu In Bnagldesh’’ শীর্ষক গবেষণায় সংখ্যালঘুদের উপর সহিংসতার খবর বাংলাদেশী মিডিয়ায় কীভাবে প্রকাশিত হয় এবং তা জনমতের উপর কেমন প্রভাব ফেলে তা অনুসন্ধান করেছেন। কেস স্টাডি করার জন্য ২০১২ সালের কক্সবাজারের রামুতে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের উপর হামলার সময়টিকে বেছে নিয়েছেন। ২০১২ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৩ সালের মার্চ পর্যন্ত সময়ে দুটি বাংলা পত্রিকা নয়া দিগন্ত ও জনকণ্ঠ এবং একটি ইংরেজি পত্রিকা দ্য ডেইলি স্টারের প্রকাশিত সংবাদের আধেয় বিশ্লেষণ করেন। তাছাড়াও প্রশ্নপত্র প্রণয়নের মাধ্যমে ৫০ জন মুসলিম ও অন্যান্য ধর্মের লোকের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেন। ফোকাস গ্রুপ ডিসকাশন, বিশেষজ্ঞ সাক্ষাৎকার পদ্ধতি ও সংখ্যালঘু প্রতিনিধিদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। তথ্য বিশ্লেষণের মাধ্যমে দেখা যায় যে, সংখ্যালঘু সহিংসতার ব্যাপারটি মানুষ কীভাবে গ্রহণ করবে তার উপর মিডিয়ার অনেক প্রভাব রয়েছে। এ ব্যাপারে জনমত গঠনে মিডিয়া গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও প্রায়ই নির্দিষ্ট স্বার্থ রক্ষায় ও রাজনৈতিক ভাবাদর্শে প্রভাবিত হয়ে মিডিয়া পক্ষপাতদুষ্ট সংবাদ প্রচার করে (Islam & Rashid, 2013)

২০১৬ সালে Amber Mubeen, Dr. Arshad এবং Rabia Qusien ‘‘Minorities in Pakistan: Role of Pakistani TV Channels in Highlighting Minorities’ Rights’’ শীর্ষক গবেষণায় সংখ্যালঘুদের অধিকার আদায়ে এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় পাকিস্তানের বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলোর ভূমিকা পর্যালোচনা করেন। গবেষণাটি করতে লাহোরের পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৫৬ জন শিক্ষার্থীর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। পাকিস্তানী টিভি চ্যানেল সংখ্যালঘু ইস্যুতে সচেতনতা বৃদ্ধি করে, সংখ্যালঘুদের তাদের কন্টেন্টে উল্লেখযোগ্য হারে হাইলাইটস করে, তাদের অধিকার প্রমোট করে, সংখ্যালঘুদের অধিকারের সংবাদ প্রচারে পাকিস্তানী টিভি চ্যানেল নিরপেক্ষতা বজায় রাখে- এই চারটি পূর্বানুমানের ভিত্তিতে গবেষণাটি পরিচালিত হয়। প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, উত্তরদাতারা মনে করেন পাকিস্তানী টিভি চ্যানেলগুলো সংখ্যালঘুদের অধিকারের ব্যাপারে সচেতনতা বৃদ্ধিতে যথেষ্ট সজাগ এবং সংবাদ প্রচারে নিরপেক্ষতা বজায় রাখা হয় (Arshad, Mubeen & Qusien, 2016)

Qandeela Ambreen ২০১৪ সালে ‘‘Representation of Religious Minorities in Pakistan Print Media: A Study of Daily Dawn, The News And The Nation’’ শীর্ষক গবেষণায় পাকিস্তানের তিনটি পত্রিকায় ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিয়ে ইতিবাচক নাকি নেতিবাচক সংবাদ প্রচার করে তা অনুসন্ধান করেন। এজন্য তিনি ডেইলি ডন, দ্য নিউজ ও দ্য নেশন পত্রিকা তিনটির জানুয়ারি ২০০৯ থেকে ডিসেম্বর ২০১১ সাল পর্যন্ত আধেয় বিশ্লেষণ করেন এজন্য তিনি আধেয়কে সংবাদ, সম্পাদকীয় ও ছবি- তিনটি ইউনিটে ভাগ করে তাদের আধেয় বিশ্লেষণ করেন। প্রকাশিত সংবাদ, সম্পাদকীয় ও ছবিকে ইতিবাচক, নেতিবাচক ও নিরপেক্ষ এই তিনটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করেছেন। বিশ্লেষণ শেষে দেখা যায়, উপরের তিনটি পত্রিকাই ধর্মীয় সংখ্যালঘু বিষয়ক ইস্যু প্রচারে ইতিবাচক। তবে এদের মধ্যে সংবাদ আইটেম প্রচারে দ্য নেশন সবচেয়ে বেশি ইতিবাচক ছিল যা মোট সংবাদের ৯০%। নেতিবাচক সংবাদ বেশি প্রচার করেছে ডেইলি ডন যা মোট সংবাদের ২০%। আর এই সময়ে নিরপেক্ষ সংবাদ প্রচার করেছে শুধু দ্য নেশন পত্রিকা যা মোট সংবাদের ৫%। অন্যদিকে সম্পাদকীয়’র মধ্যেও সবচেয়ে বেশি ইতিবাচক সংবাদ প্রচার করেছে দ্য নেশন আর নেতিবাচক সম্পাদকীয় বেশি প্রচার করেছে দ্য নিউজছবির মধ্যে ডন পত্রিকা ১০০% ইতিবাচক ছবি প্রকাশ করেছে। দ্য নিউজ ২০% নেতিবাচক ছবি প্রচার করেছে (Ambreen, 2014)

২০১০ সালে প্রকাশিত ‘‘The Role of The Media During Communal Riots in India: A Study of The 1984 Sikh Riots and the 2002 Gujarat Riots’’ শীর্ষক গবেষণায় Saifuddin Ahmed ভারতে ১৯৮৪ সালে শিখ দাঙ্গা এবং ২০০২ সালের গুজরাটে হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গায় গণমাধ্যমের ভুমিকার তুলনামূলক বিশ্লেষণের মাধ্যমে ভারতের ধর্ম, রাজনীতি ও গণমাধ্যমের মধ্যে জটিল সম্পর্কটি তুলে ধরেছেন। এতে তিনি দেখতে পান সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার ব্যাপারে সংবাদ প্রচার করতে ভারতীয় গণমাধ্যম আগের তুলনায় দায়িত্ব নিয়ে প্রচার করছে। ১৯৮৪ সালের দাঙ্গার সময়ে শত শত শিখদের উপর অত্যাচারের সংবাদ প্রচার করতে পারত না। ইন্দিরা গান্ধীর হত্যার ব্যাপারটিই তারা গুরুত্ব দিয়ে প্রচার করেছে। দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া, দ্য হিন্দুস্তানি টাইমস এর মতো পত্রিকাও তখন শিখ হত্যার সংবাদ প্রকাশ করতে পারে নি। অন্যদিকে ২০০২ সালে গুজরাটের দাঙ্গায় মিডিয়া যথেষ্ট দায়িত্বশীল আচরণ করেছে। স্টার নিউজ, আজ তক, জি নিউজ এর মতো টিভি চ্যানেলগুলো সরকারের সমালোচনা করতেও ছাড়ে নি। এমনকি ভারতে এসময়ে প্রথমবারের মতো মুসলিমদের উপর অত্যাচারের সংবাদ লাইভে গিয়ে প্রচার করেছে। তবে গুজরাটি ডেইলি সন্দেশ, গুজরাটা সমাচার এর মতো আঞ্চলিক পত্রিকাগুলো সাম্প্রদায়িকতা উসকে দেওয়ার কাজ করেছে (Ahmed, 2010)

২০১২ সালে প্রকাশিত Getting the Facts Right: Reporting Ethnicity and Religion শীর্ষক এক গবেষণায় Dr. Verica Rupar ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলিতে জাতিগত ও ধর্মীয় বিষয়গুলো কভার করার ক্ষেত্রে সাংবাদিকদের মনোভাব ও কাজের ধরন অনুসন্ধান করেন। ডেনমার্ক, ফ্রান্স, জার্মানি, গ্রিস, ইতালি, হাঙ্গেরি, লিথুয়ানিয়া, স্লোভাকিয়া ও যুক্তরাজ্য এ নয়টি দেশের ১১৭ জন সাংবাদিক ও সম্পাদকের সাক্ষাৎকার এবং ২৯৯ টি সংবাদ প্রতিবেদনের ভিত্তিতে এই গবেষণাটি পরিচালনা করেন। ভালো মানের সাংবাদিকতার অন্তরায় হিসেবে গণমাধ্যমের আর্থিক দুরবস্থা, সাংবাদিকদের অতিরিক্ত কাজের চাপ, সময়ের অভাব, জ্ঞানের অভাব এবং প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের অভাবকে উল্লেখ করা হয়। সাক্ষাৎকার নেয়ার সময় সাংবাদিকরা জাতিগত ও ধর্মীয় ইস্যু নিয়ে লেখার সময় বস্তুনিষ্ঠতা, পক্ষপাতমুক্ত সংবাদ পরিবেশন, বহুত্ববাদ, গণতন্ত্রের মূল্যবোধের প্রতি তাদের দায়বদ্ধতার কথা স্বীকার করেন। তবে তারা এটাও স্বীকার করেন যে, গণমাধ্যম সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী সম্বন্ধে নেতিবাচক গৎবাঁধা ধারণা নির্মাণ করে (Rupar, 2012)

২০১৭ সালে প্রকাশিত ‘‘Image of Muslims in Mainstream English Dailies of India: A Critical Analysis of Four Major Newspaper During 2007 & 2017’’ শীর্ষক গবেষণায় Mujeeb Liyakat ভারতের ইংরেজি দৈনিকগুলো সংখ্যালঘু মুসলিম সংক্রান্ত ইস্যুগুলো কীভাবে মিডিয়াতে প্রচার করা হয় তা অনুসন্ধান করেছেন এজন্য তিনি চারটি ইংরেজি দৈনিক দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া, হিন্দুস্তান টাইমস, দ্য হিন্দু, এবং দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস- এর ২০০৭ সালের জানুয়ারি থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত এবং ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত কন্টেন্ট অ্যানালাইসিস করেন। এজন্য তিনি আধেয়কে সংবাদ, আর্টিকেল, সম্পাদকীয়, ফিচার, সম্পাদক বরাবর চিঠি এবং ছবি – এ ছয়টি ইউনিটে ভাগ করেন। তথ্য বিশ্লেষণ করে তিনি দেখেন যে, দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া ২০০৭ সালে মুসলিম সংক্রান্ত ইস্যু নিয়ে ৩.১% সংবাদ প্রকাশ করে এবং ২০১৭ সালে তা ৩.৫%। হিন্দুস্তান টাইমস ২০০৭ সালে ২.% ও ২০১৭ সালে ৩.%দ্য হিন্দু ২০০৭ সালে ২.৪% এবং ২০১৭ সালে ২.৮%। দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস ২০০৭ সালে ২.৮% এবং ২০১৭ সালে ২.৯% সংবাদ প্রকাশ করে। ২০০৭ সালের তুলনায় ২০১৭ সালে মুসলিম সংক্রান্ত ইস্যু নিয়ে মিডিয়া কভারেজ বেড়ে যায়। তবে উপরের চারটি পত্রিকাতেই ২০০৭ সালের তুলনায় ২০১৭ সালে মুসলিম সংক্রান্ত নেতিবাচক সংবাদ প্রচার বেড়েছে, অপরদিকে ইতিবাচক সংবাদ কমেছে। তিনি মনে করেন, এসব নেতিবাচক সংবাদ জাতীয় ঐক্য, সৌহার্দ্য ও সামাজিক অগ্রগতিতে বাঁধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে (Liyakat, 2017)

Dr. Ferdous Jahan Muhammad Ashikur Rahman তাদের ‘‘Violence Against Minority Population in Bangladesh: Gains of Few and Loss of The Nation’’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে বলেন, আমাদের দেশে সংখ্যালঘুদের ভোট ও জমি নিয়ে রাজনীতি চলছে। এছাড়াও তাদের উপর সহিংসতার পেছনে অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় কারণ বিদ্যমান। গবেষণাটি করতে তারা খুলনা, যশোর, সাতক্ষীরা ও আশেপাশের সংখ্যালঘু জনগণের সাক্ষাৎকার নেন এবং পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের সাহায্য নেন। গবেষণাটি করে তারা দেখতে পান যে, ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময়ে এবং ২০১৩ সালে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের সময়ে অন্যান্য সময়ের তুলনায় সংখ্যালঘুদের উপর সহিংসতা বেড়ে গেছে। সহিংসতাকারীরা সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন চালানোর জন্য তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপপ্রচার চালায়। মিডিয়ার ভূমিকার কথা বলতে গিয়ে বলেন, বর্তমানে মিডিয়া সংখ্যালঘু ইস্যুতে অন্যান্য সময়ের তুলনায় বেশি গুরুত্ব দিয়ে সংবাদ প্রচার করে থাকে। তবে মিডিয়ার রাজনীতিকরণের কারণে প্রচারিত এসব সংবাদে যথেষ্ট বিতর্ক রয়েছে। একই বিষয়ে বিভিন্ন মিডিয়া বিভিন্নভাবে সংবাদ প্রচার করে থাকে। (Jahan & Rahman, 2014)

উপরের আলোচনা থেকে দেখা যায় যে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সংখ্যালঘু সংক্রান্ত নানা গবেষণা হয়েছে। তবে গণমাধ্যম ও সংখ্যালঘু বিষয়ক গবেষণার পরিমাণ কম গণমাধ্যম ও সংখ্যালঘু বিষয়ক যেসব গবেষণা হয়েছে তাতে গণমাধ্যমে সংখ্যালঘু প্রতিফলনের সব দিক ওঠে আসে নি। Muhammad Rashedul Hasan ৬ টি পত্রিকা নিয়ে ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কোন পত্রিকাটি বেশি ইতিবাচক বা নেতিবাচক সংবাদ প্রকাশ করে তা বের করেছেন। Dr. Syed Rezona Rashid Azharul Ialam কক্সবাজারের রামুতে বৌদ্ধদের উপর সহিংসতার সংবাদ কীভাবে পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে এবং সাক্ষাৎকার গ্রহণের মাধ্যমে জনমতের উপর তা কি প্রভাব পড়ে তা অনুসন্ধান করেন। Qandeela Ambreen পাকিস্তানের সংবাদপত্রগুলো ইতিবাচক, নেতিবাচক নাকি নিরপেক্ষ সংবাদ প্রচার করে তা বের করেছেন Saifuddin Ahmed ভারতের গণমাধ্যমগুলো আগের তুলনায় এখন বেশি সংখ্যালঘু বিষয়ক সংবাদ প্রকাশ করে সেটি বের করে দেখিয়েছেন Mujeeb Liyakat ভারতের ইংরেজি দৈনিকগুলো সংখ্যালঘু মুসলিম সংক্রান্ত ইস্যুগুলোতে ২০০৭ এর চেয়ে ২০১৭ তে বেশি নেতিবাচক সংবাদ প্রচার করে এবং ইতিবাচক সংবাদ কম প্রচার করে তা দেখিয়েছেন সবগুলো গবেষণাতেই দেখা যায়, গণমাধ্যম সংখ্যালঘু বিষয় নিয়ে কতটুকু সংবাদ প্রচার করে, ইতিবাচক নাকি নেতিবাচক সংবাদ বেশি প্রচার করে, আগের তুলনায় এখন কম নাকি বেশি সংবাদ প্রচার করে এসব জিনিস নিয়ে কাজ হয়েছেসংখ্যালঘু সংক্রান্ত কোন সংবাদগুলো বেশি আসে, তাদের উপর নির্যাতনের সংবাদ বা তাদের উন্নয়নের সংবাদ কেমন আসে, সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে কাদের কাছ থেকে তথ্য নেয় এই বিষয়গুলো নিয়ে খুব একটা কাজ হয় নি। এ গবেষণায় সমাজে সংখ্যালঘুদের অবস্থা ও গণমাধ্যমে এর প্রতিফলন বিষয়ে আলোকপাত করার মাধ্যমে সমাজে সচেতনতা গড়ে তুলতে সাহায্য করবে।




অধ্যায় ৩ঃ গবেষণা পদ্ধতি

রীতিসিদ্ধ গবেষণা পদ্ধতি মেনে এই গবেষণাটি পরিচালিত হবে। যেহেতু গবেষণার সার্থকতা নির্ভর করে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্তের যথাযথ বিশ্লেষণের উপর। এর মাধ্যমেই গবেষণা প্রশ্ন ও উদ্দেশ্যকে ভালোভাবে বোঝা সম্ভব। গুনগত(Qualitative) গবেষণা পদ্ধতি মেনে গবেষণাটি পরিচালনা করা হবে।


৩.১ গবেষণা নমুনায়নঃ
গবেষণা সমগ্রক হচ্ছে কোন নির্দিষ্ট গুণাবলীসম্পন্ন এককের সমষ্টি যা থেকে গবেষণা তথ্য সংগ্রহ করা হয় (আলম, ১৯৯৮) বাংলাদেশে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময়ে প্রকাশিত জাতীয় দৈনিকসমূহে সংখ্যালঘু বিষয়ক সংবাদকে এ গবেষণার গবেষণা সমগ্রক হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে
গবেষণাটি করতে তথ্য সমগ্রক থেকে উদ্দেশ্যমূলক প্রক্রিয়ায় নমুনা নির্বাচন করা হবে উদ্দেশ্যমূলক নমুনায়ন হচ্ছে, পছন্দ ও অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে সমগ্রকের বিশেষ বৈশিষ্ট্য প্রতিনিধিত্ব করে এমন এককগুলোকে নমুনায় অন্তর্ভুক্ত করার পদ্ধতি (তাহের, ২০০৮) এই গবেষণার জন্য প্রচারসংখ্যা, জনপ্রিয়তা ও সংবাদের মান বিবেচনায় নিয়ে নমুনা হিসেবে দৈনিক প্রথম আলো, দৈনিক জনকণ্ঠ, দৈনিক নয়া দিগন্ত, দ্য ডেইলি স্টার ও দ্য ডেইলি নিউ এইজ এই পাঁচটি পত্রিকাকে নেয়া হয়েছে আধেয় বিশ্লেষণের জন্য এই পাঁচটি পত্রিকার ২০১৮ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০১৯ সালের ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত প্রকাশিত সংখ্যালঘু বিষয়ক সংবাদকে বিবেচনা করা হবে। এ সময়ের মধ্যে প্রকাশিত সংখ্যালঘু বিষয়ক প্রত্যেকটি সংবাদকে আধেয়ের একক হিসেবে বিবেচনা করা হবে

৩.২ উপাত্ত সংগ্রহ পদ্ধতি
এই গবেষণায় নির্বাচিত সংবাদপত্রগুলো হচ্ছে তথ্য সংগ্রহের মূল উৎস। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের ১ তারিখ থেকে ২০১৯ সালের জানুয়ারির ১৫ তারিখ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে প্রকাশিত সংবাদগুলো থেকে সংখ্যালঘু বিষয়ক সংবাদ নির্বাচন করে প্রত্যেকটি সংবাদকে আধেয়ের একক ধরে কোডিং করে তথ্য সংগ্রহ করা হবে। তথ্য সংগ্রহের জন্য প্রতিটি একককে বিভিন্ন সংবাদ কাঠামোতে ভাগ করে তথ্য সংগ্রহ করা হবে।

৩.৩ উপাত্ত বিশ্লেষণ পদ্ধতি
এই গবেষণাটি করতে তথ্য সংগ্রহের হাতিয়ার হিসেবে আধেয় বিশ্লেষণ পদ্ধতি ব্যবহার করা হবে।  গণমাধ্যমের আধেয় বিশ্লেষণ হলো গণমাধ্যমের কোন টেক্সটকে গুণবাচক ও পরিমাণবাচক গবেষণা পদ্ধতির সাহায্যে বিনির্মাণ করা। মার্কিন আচরণবিদ Bernard Berelson (1952, P-18) এর মতে, ‘‘বিষয়বস্তু বিশ্লেষণ হলো যোগাযোগের আধেয়গুলোর বস্তুনিষ্ঠ, প্রণালীবদ্ধ এবং সংখ্যাতাত্ত্বিক বর্ণনার কৌশল।’’ সমাজবিজ্ঞানী Neuman বলেন, ‘‘আধেয় বিশ্লেষণ হচ্ছে টেক্সটের আধেয় সংগ্রহ ও বিশ্লেষণের কৌশল। আধেয় বলতে শব্দ, অর্থ, ছবি, প্রতীক, ধারণা, ভাব বা যোগাযোগ করার মতো যেকোন বার্তাকে বোঝায়’’ (Neuman,1997, pp.272-273; উদ্বৃত তাহের, ২০০৮)

এই গবেষণার ক্ষেত্রে গণমাধ্যম আধেয় হিসেবে মুদ্রণ মাধ্যমকে বোঝানো হয়েছে সংবাদপত্রের আধেয় সহজলভ্য, নিয়মিত, নির্ভরযোগ্য ও দীর্ঘস্থায়ী বিধায় এটি নিয়ে গবেষণা করা তুলনামূলক সহজ উপাত্ত বিশ্লেষণ করে সারণী ও পাই চার্ট ব্যবহার করে তথ্য উপস্থাপন করা হবে।

অধ্যায় ৪ঃ উপসংহার

‘একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময়ে বাংলাদেশের মূলধারার সংবাদপত্রে সংখ্যালঘুদের উপস্থাপন বিশ্লেষণ’ শীর্ষক গবেষণায় সংখ্যালঘুদের কিভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে তা বিশ্লেষণ করে দেখা হবে। কোন ধরনের সংবাদ বেশি আসে তা অনুসন্ধান করে দেখা হবে। সংখ্যালঘুদের সংবাদ প্রকাশে কোন পত্রিকার মনোভঙ্গি কেমন তা দেখা হবে।



অধ্যায় ৫ঃগবেষণার সময়সূচি

প্রস্তাবিত গবেষণাটি করতে মোট ৯০ (৩ মাস) দিন সময় লাগতে পারে। যেসব কাজ করতে সময় ব্যয় হতে পারে-
ক্রমিক নম্বর
কার্যক্রম
সময়
০১
গবেষণা বিষয় নির্ধারণ
১০ দিন
০২
প্রাসঙ্গিক সাহিত্য পর্যালোচনা ও গবেষণা নকশা প্রণয়ন
১৫ দিন
০৩
তথ্য সংগ্রহ
১০ দিন
০৪
উপাত্ত বিশ্লেষণ ও লিপিবদ্ধকরণ
৩০ দিন
০৫
চূড়ান্ত গবেষণা প্রতিবেদন লিখন
২০ দিন
০৬
মুদ্রণ ও বাঁধাই
৫ দিন

মোট সময়
৯০ দিন


অধ্যায় ৬ঃ গবেষণা বাজেট

এ গবেষণা কর্মটি করতে আনুমানিক খরচ লাগতে পারে ২৫০০০ (পঁচিশ হাজার) টাকা। প্রস্তাবিত গবেষণাটি করতে কোন কোন খাতে কত খরচ হতে পারে তা নিম্নরূপঃ
ক্রমিক নম্বর
বাজেটের খাত
সম্ভাব্য খরচ
০১
সংশ্লিষ্ট বই, পত্রিকা ও জার্নাল ক্রয়
৫০০০ টাকা
০২
প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি(খাতা, কলম, পেন্সিল, স্কেল ইত্যাদি) ক্রয়
৩০০০ টাকা
০৩
যোগাযোগ( ইন্টারনেট, মোবাইল) বাবদ খরচ
২০০০ টাকা
০৪
যাতায়াত খরচ
৫০০০ টাকা
০৫
প্রতিবেদন তৈরি (কম্পোজ, প্রুফ, প্রিন্ট ও বাঁধাই)
২০০০ টাকা
০৬
অন্যান্য
৩০০০ টাকা
মোট খরচ
২০,০০০ টাকা


কৃতজ্ঞতাঃ মুহাম্মদ খাইরুজ্জামান 
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ , ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় । 

তথ্যসূত্র

আলম, খুরশিদ (১৯৯৮) সমাজ গবেষণা পরিচিতি। ঢাকাঃ মিনার্ভা পাবলিকেশন্স
আলমগীর, মো. শাহ (২০১৫)। মিডিয়া ও সাম্প্রদায়িকতা। ঢাকাঃ প্রেস ইন্সটিটিউট অব বাংলাদেশ।
ইসলাম, ড. মো. (২০১০)সামাজিক গবেষণা। ঢাকাঃ তাসমিয়া পাবলিকেশন্স।
চৌধুরী, মোহাম্মদ সাইফুল আলম (২০১১)। সংবাদপত্রে পার্বত্য চট্টগ্রামের অবরুদ্ধ জীবনের স্বরূপ সন্ধান। সামাজিক বিজ্ঞান পত্রিকা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। খণ্ড ৫, সংখ্যা ৫।
তাহের, . মো. আবু (২০০৮) সামজিক গবেষণা পরিচিতি ঢাকাঃ অনু প্রকাশনী
দৈনিক প্রথম আলো  ১৭ নভেম্বর, ২০১৮ সংগৃহীতঃ https://www.prothomalo.com/bangladesh/article/1565653/
দৈনিক ইনকিলাব ২৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩
ফেরদৌস, রোবায়েত (২০১৩)। গণমাধ্যম ও আদিবাসী। ঢাকাঃ গতিধারা প্রকাশনী
মামুন, আ আল ও হক, ফাহমিদুল (২০১৩)। মিডিয়া সমাজ সংস্কৃতি। ঢাকাঃ আগামী প্রকাশনী।
রহমান, আনিস (২০১১)। ‘গণমাধ্যমের রাজনৈতিক অর্থনীতিঃ একটি তাত্ত্বিক পর্যালোচনা’। যোগাযোগ, সংখ্যা ১০, ঢাকা।
সামিন, সাইফুল ও হায়দার, শাওন্তী (২০১৪)। যোগাযোগের তত্ত্ব ও প্রয়োগ। ঢাকাঃ প্রেস ইন্সটিটিউট অব বাংলাদেশ
Ahmed, Saifuddin (2010). The Role of The Media During Communal Riots in India: A Study of The 1984 Sikh Riots and the 2002 Gujarat Riots. Media Asia, 37(2), 103-111.
Ambreen, Qandeela (2014). Representation of Religious Minorities in Pakistan Print Media: A Study of Daily Dawn, The News And The Nation. American International Journal of Contemporary Research. Vol 4, No.1.
Arshad, Mubeen, A, and Qusien, R. (2016). Minorities in Pakistan: Role of Pakistani TV Channels in Highlighting Minorities’ Rights. Global Media Journal. Pakistan. Vol 09, Issue 2.
Berelson, B. (1952). Content Analysis In Communication Research. New York, NY: free Press.
Entman, R. (1993). Framing: Toward Clarification of a Fractured Paradigm. Journal of Communication 43(4): 6-27.
Goffman, E. (1974). Frame analysis: An Essay on the Organization of Experience. New York: Harper & Row.
Hasan, Muhammad Rashedul (2014). Coverage of Minority Issues in The Selected National Dailies During The 10th Parliamentary Election in Bangladesh. DIU Journals of Humanities and Social Science, Vol. 2, pp. 129-151.
Islam, Md. A. and Rashid, Dr. S. R. (2013). The Role Of Media In Influencing Public Opinion On Violence Against Minorities: The Case Study Of Ramu In Bnagldesh. Journal of International Affairs, 17(1, 2).
Jahan, Dr. Ferdous and Rahman, Muhammad A. (2014). Violence Against Minority Population in Bangladesh: Gains of Few and Loss of The Nation. Dhaka: Uttaran.
Kitzinger, J. (2007). Frame & Frame analysis. In Eoin Devereux (Eds.), Media Studies: Key Issues and Debates (pp.134-165). London: Sage Publications.
Liyakat, Mujeeb (2017). Image of Muslims in Mainstream English Dailies of India: A Critical Analysis of Four Major Newspaper During 2007 & 2017. IMPACT: International Journal of Research in Humanities, Arts and Literature. Vol. 5, Issue 8.
McQuail, D. (1987). Mass Communication Theory: An Introduction, (2nd ed). Beverly Hills, CA: Sage
Pan, Z., Koisicki, G.M. (1993). Framing Analysis: An approach to news discourse. Political Communication, 10: 55-75.
Rupar, Dr. Verica (2012). Getting the Facts Right: Reporting Ethnicity and Religion. Brussels: International Federation of Journalists. Available at: http://ethicaljournalisminitiative.org/assets/docs/107/024/7d0676b-793d318.pdf


No comments

Powered by Blogger.