আমার প্রথম পোস্ট
গণমাধ্যমের
ভুমিকা
মিয়ানমারের
প্রায় সব গণমাধ্যমই সরকার বা সেনা নিয়ন্ত্রিত৷ ২০১১ সাল পর্যন্ত সরকারি বা ব্যক্তি
মালিকানাধীন সংবাদপত্রগুলো সবই সরকার কঠিন নিয়মে আবদ্ধ ছিল৷
যুবায়ের আহমেদ
যুবায়ের
আহমেদ, ডয়চে ভেলে
কোনো পত্রিকায়
কোনো প্রতিবেদন সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে প্রকাশ করা সম্ভব ছিল না৷ ২০১১ সালের
জুনে এই নিয়ম কিছুটা শিথিল করা হয়৷ গণমাধ্যম পর্যবেক্ষণ ও নিবন্ধন বিভাগ বন্ধ করে
দেয়া হয়৷ তখন থেকে এ পর্যন্ত মিয়ানমারে ৩১টি দৈনিক সংবাদপত্র প্রকাশের অনুমোদন
পায়, যার মধ্যে ২৪টি স্থানীয় ভাষায়৷
তবে ২০১১
সালের পরও অনেক সাংবাদিককেই জেল জরিমানা গুনতে হয়েছে প্রকাশিত প্রতিবেদনের জন্য৷
অক্টোবরের ঘটনার পর একটি গবেষণায় দুই সপ্তাহ ধরে মিয়ানমারের দু'টি পত্রিকায়
প্রকাশিত খবর বিশ্লেষণ করা হয়৷ এর একটি হলো গ্লোবাল নিউ লাইট অফ মিয়ানমার, যেটি
দেশটির সবচেয়ে পুরোনো পত্রিকা নিউ লাইট অফ মিয়ানমারের আন্তর্জাতিক সংস্করণ এবং
সরকার নিয়ন্ত্রিত৷
অন্যটি
মিয়ানমার টাইমস৷ এটি ব্যক্তিখাতের এবং একমাত্র বিদেশি মালিকানার পত্রিকা৷ এই ঘটনায়
এই পত্রিকার রিপোর্ট ব্যাপক আলোচিত হয়েছে৷
গবেষণাটি ছিল,
অক্টোবরের ঘটনার পর রোহিঙ্গাদের কিভাবে চিত্রায়িত করা হয়েছে৷ এছাড়া চিত্রায়িত করার
সময় কাদের বক্তব্য ব্যবহার করা হয়েছে৷ যদিও রোহিঙ্গাদের চিত্রায়নের জন্য ছয়টি ভাগে
ভাগ করা হয়েছিল, মোটা দাগে ‘ভিক্টিম' বা
‘অপরাধী' – এই দু'টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে৷
দেখা গেছে,
গ্লোবাল নিউ লাইট অফ মিয়ানমার পত্রিকায় যতবার রোহিঙ্গাদের বিষয়টি এসেছে, ততবারই
তাঁদের অপরাধী হিসেবেই তুলে ধরা হয়েছে৷ আবার, মিয়ানমার টাইমসে প্রায় ৬০ ভাগ সময়
ভিক্টিম হিসেবেই চিত্রায়িত হয়েছেন রোহিঙ্গারা৷
গ্লোবাল নিউ
লাইটে এমনও খবর প্রকাশিত হয়েছে যে, দুষ্কৃতিকারীরা ঘরে আগুন জ্বালিয়ে চলে গেছে৷
তবে সবচেয়ে লক্ষ্যণীয় বিষয় হচ্ছে, পত্রিকাটির যে সব রিপোর্ট গবেষণার আওতায় ছিল,
তার কোথাও ‘রোহিঙ্গা' শব্দটি ছিল না৷ এঁদের ‘বাঙালি সেটলার' বলে চিহ্নিত করা
হয়েছে৷ এই ‘রাজনীতি' পরিষ্কার৷
বোঝাই যায়,
এটা গণমাধ্যমের নীতি নয়, সরকারি নীতি৷ কারণ গবেষণায় দেখা গেছে, বেশিরভাগ রিপোর্টেই
তারা ইরাবতী বা অন্যান্য সরকারি নিউজ এজেন্সির খবর হুবুহু ছাপিয়ে দিচ্ছে৷
অন্যদিকে,
মিয়ানমার টাইমস আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধর্ষণের বিষয়টি নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ
করে, যা ব্যাপক আলোড়ন জাগায় আন্তর্জাতিক মহলে৷
তবে
মিয়ানমারের ভেতরে এই পত্রিকাটি তেমন কেউ পড়ে না৷ এর কারণ পত্রিকাটি তুলনামূলক
নতুন৷ তাই সরকারি ভাষ্যগুলোই অন্যান্য এলাকার মানুষের কাছে পৌঁছায়৷ গবেষণায় এ-ও
দেখা যায়, গ্লোবাল নিউ লাইট প্রায় ৯১ শতাংশ বক্তব্য প্রকাশ করেছে সরকার ও রোহিঙ্গা
বিরোধী গোষ্ঠীর৷ অন্যদিকে, মিয়ানমার টাইমসের বেলায় সেটি ছিল ৫৮ শতাংশ৷
গবেষণার সীমাবদ্ধতার
জায়গায় গবেষক লিখেছেন যে, বার্মিজ ভাষায় দক্ষতা না থাকায়, সে ভাষার কোনো পত্রিকা
বিশ্লেষণ করা যায়নি৷
সরকারি
পত্রিকায় যেভাবে ঢালাওভাবে ঘটনাটি প্রকাশ করেছে তা একটি গণতান্ত্রিক দেশে নিতান্তই
গণতন্ত্রহীনতার নগ্ন বহিঃপ্রকাশ বলে মনে করা হয়৷ সব মিলিয়ে রাষ্ট্রহীনতার ইতিহাসে
সবচেয়ে মর্মান্তিক চিত্রই বোধ হয় রোহিঙ্গাদের৷
আপনার কি কিছু
বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷
No comments