বাংলা সাহিত্যে ভূত
বাংলা
সাহিত্যের একটি উল্লেখযোগ্য জায়গা দখল করে আছে ভূত বা অলৌকিক কাহিনী। ভূতসংক্রান্ত বা ভৌতিক সাহিত্যকর্ম বাংলা সাহিত্যের একটি জনপ্রিয়
ধারা। দীর্ঘদিন
যাবত বাংলা সাহিত্যে এ ধারা চলে আসছে। বাংলা
সাহিত্যের অনেক জনপ্রিয় লেখকই এ ধারায় লিখেছেন।
সুনীল
গঙ্গোপাধ্যায়ের লেখা ‘কাকাবাবু’ সিরিজের গল্প ‘কাকাবাবু হেরে গেলেন?’ গল্পেও অনেক
রংচং মাখিয়ে লেখক ভূতকে এনেছেন। আবার গল্পের শেষে প্রমাণ করেছেন ভূত বলে কিছু
নেই। আবার সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় তাঁর স্মৃতিকথামূলক আমি যখন...তুমি বইয়ে শৈশবের
স্মৃতিচারণা করে ‘মাত্র একবার’ লেখাটিতে লিখেছেন ভারতের রাঁচির জঙ্গলে রাতের বেলা
অসম্ভব অলৌকিক দৃশ্য দেখেছেন। জঙ্গলের গাছেরা তাঁর সঙ্গে কথা বলে তাঁকে বিপদ থেকে
উদ্ধার করে। তাই তো লিখেছেন, ‘আমি যদি অলৌকিকের দেখা পেয়ে না থাকি—তবে অলৌকিক
নামে এ লেখাটা লিখছি কেন? না, পেয়েছিলাম একবার। একটি অসম্ভব অলৌকিক দৃশ্যের
রাত্রি।’
সমরেশ
মজুমদারের লেখা কিশোর উপন্যাস ড্রাকুলার সন্ধানে অর্জুন বইয়ে সত্যসন্ধানী
অর্জুনকেও কয়েকবার ভূত দেখিয়ে ধাঁধায় ফেলে দিয়েছিলেন লেখক। অবশ্য গল্পের শেষে
তা মনের ভুল বলেই প্রমাণ করেছেন লেখক। শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের লেখা পাতালঘর
উপন্যাসেও কিন্তু ভূতের দেখা মিলেছে। তবে গল্পের মাঝামাঝি এসে জানা যায়, সেটা ভূত
না, এলিয়েন, ভিনগ্রহের প্রাণী।
বাংলা
সাহিত্যে হুমায়ূন আহমেদকে বলা যেতে পারে ভূতবিলাসী লেখক। তাঁর অনেক লেখায় ভূতের
বিচরণ ছিল। অন্য লেখকদের ভূতের লেখাও পড়তেন তিনি। তিনি বেঁচে থাকতে বেশ কিছু সাক্ষাত্কারে সরাসরি ভূতে
বিশ্বাস করেন, এমনটা না বললেও জগত্-সংসারে অতীন্দ্রিয় বিষয়ের কথা তিনি অবলীলায়
স্বীকার করেছেন।
বাংলা
সাহিত্যে পশ্চিম বাংলায় জনপ্রিয় লেখক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়। শিশুদের জন্য প্রচুর
লিখেছেন, যার মধ্যে ভূতের গল্পও একটি বিশেষ স্থান দখল করে আছে। অবাক হওয়ার বিষয়
হচ্ছে, শীর্ষেন্দু সত্যিকার ভূতে বিশ্বাস করেন। ‘ভূতেরা আছে, আমি ভূতের অস্তিত্বে
বিশ্বাস করি এবং তাদের ভয় পাই। শীর্ষেন্দু মনে করেন, টেলিভিশনের এ যুগেও শিশুরা
ভূতের গল্প পড়তে ভালোবাসে। নিজে ভয় করলেও শীর্ষেন্দু কিন্তু শিশুদের কাছে ভূতকে
মজা করেই বর্ণনা করেছেন।
বাংলা
সাহত্যের আরেক বিখ্যাত লেখক বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায় ওরফে বনফুলও ভূত-প্রেতে বিশ্বাস
করতেন। শোনা যায়, তার বাড়িতে কেউ গেলে তিনি তাকে ভূতের গল্প শোনাতেন।
No comments