নানারকম ভূত ও ভূতের বাড়ি
নানারকম ভূত ও ভূতের বাড়ি
ভূতের
ধারণাটি বিশ্বব্যাপী থাকলেও ভূতের রকম বা ধরনে ও তাঁদের বাসস্থনে বেশ ভিন্নতা লক্ষ্য
করা যায়। একটু
মজার বিষয়ই যে, মানুষ যেমন কেউ গাছতলায় আর কেউ বহুতলায় বাস করে,তেমনি ভূতও কেউ গাছে, মাঠে,-ঘাটে বাস করে ও কেউ হোয়াইট হাউস বা রাজপ্রাসাদে
বাস করে। হোয়াইট হাউস এর কিছু কর্মকর্তা বিশ্বাস করেন যে, হোয়াইট হাউস এ ভূত
রয়েছে। সুইডেনের রানীও বিশ্বাস করেন যে, তাঁদের রাজপ্রাসাদে ভূত বসবাস করে।তবে
তারা কারো ক্ষতি করে না।হয়ত সভ্য ভুত।সুইডেন বলে কথা। তাই মজা করে দি লোকাল নামে একটি
ওয়েবসাইট মন্তব্য করেছিল- "রাজা-রানীর বন্ধু ভূতেরা সম্ভবত ওখানেই বাস করে। জায়গাটা সৌখিন ভূত শিকারীদের
ঘুরে দেখা উচিত"।
তবে বাংলাদেশে বা বাংলা সংস্কৃতিতে যে ভূত দেখা জায়,তারা
এত সভ্য নয়।এরা সুযোগ পেলেই মানুষের ক্ষতি করে বা মেরে ফেলে। বাংলার
ভূতদের নির্দিষ্ট কিছু বৈশিষ্ট্য আছে। এসব বৈশিষ্ট্যের কয়েকটি অবশ্য দুনিয়ার সব
দেশের ভূতের বেলাতেই দেখা যায়। ভূতেরা নিজেদের ইচ্ছেমতো যেকোনো চেহারা ধারণ করতে
পারে, মানুষের এমনকি পশুপাখিরও। বাংলার বেশির ভাগ ভূত কমবেশি মানুষের চেহারাতেই
দেখা দেয়। তবে পা দেখে নাকি ভূতের অস্তিত্ব বোঝা যায়। মাটি যেহেতু
পবিত্র উপাদান, তাই ভূতেরা মাটির স্পর্শ এড়িয়ে চলে। অর্থাৎ ভূত মাটির ওপরে ভেসে
থাকে। ভূতের আর দুটি নিশ্চিত বৈশিষ্ট্য হচ্ছে— এদের ছায়া পড়ে না এবং তারা নাকি নিচু
স্বরে কথা বলে। গ্রামবাংলায় ভূত দেখা যায় গাছের ডালে সাদা কাপড়ে। বাংলার আদি ভৌতিক
গল্পগুলোয়ও ভূতের এসব বৈশিষ্ট্যই দেখা যায়।
বাংলা সংস্কৃতিতে নানা ধরণের ভুত প্রচলিত আছে। বাংলার
মানুষের বিশ্বাস কিংবা কুসংস্কারের সঙ্গে এসব ভূত এবং তাদের কর্মকাণ্ড মিশে আছে।এসব
ভূতের মধ্যে রয়েছে-
পেত্নী: নারী ভূত। অবিবাহিত ও অতৃপ্ত আত্মা নিয়ে মৃত নারীই
পেত্নী হন। পেত্নী শব্দটি এসেছে সংস্কৃত শব্দ প্রেতনী (প্রেতের স্ত্রী লিঙ্গবাচক
শব্দ) থেকে। পেত্নী যেকোনো মানুষের চেহারা ধারণ করতে পারে। পেত্নীরা থাকে শ্যাওড়া
ও তেঁতুল গাছে।
শাকচুন্নি: নামটি এসেছে সংস্কৃত শব্দ শঙ্খচূর্ণী থেকে।
ইনিও নারী ভূত। তার হাতে থাকে শাখা, যা হিন্দু বিবাহিত নারীদের রীতি। শাকচুন্নি
সাধারণত বিবাহিত ধনী নারীদের শরীরে ভর করে কারণ তারা বিবাহিত জীবন উপভোগ করতে চায়।
শাকচুন্নির গায়ে থাকে সাদা বা লাল শাড়ি। তারা বাস করে পুকুর বা দীঘির পাড়ে এবং
বিবাহিত নারীরা পুকুরে গেলে তখন শাকচুন্নিরা তাদের শরীরে ভর করে।
মেছোভূত: মেছোভূতের গল্প বাংলা সাহিত্যে প্রচুর দেখা যায়।
এই ভূতের মূল কাজ মাছ খাওয়া। এরা থাকে পুকুর, দীঘি কিংবা নদীর ধারে অর্থাত্ যেখানে
জেলেরা মাছ ধরে। মেছোভূত জেলেদের নৌকা থেকে বা মানুষের রান্নাঘর থেকেও মাছ চুরি
করে নিয়ে যায়। গ্রামের মানুষ বাজার থেকে মাছ কিনে ফেরার পথে নির্জন স্থানে
মেছোভূতের পাল্লায় পড়ে। মোছোভূত ভয় দেখিয়ে মাছ কেড়ে নেয়।
ডাইনি: বাঙালির অতি পরিচিত ভূত। গালি দিতেও হরহামেশাই এ
নাম ব্যবহূত হয়। ডাইনি অবশ্য মৃত আত্মা নয়, এরা জীবিত। বৃদ্ধ নারী, যারা কালোজাদু
জানেন, তাদেরকেই ডাইনি হিসেবে আখ্যা দেয়া হয়। গ্রামে ডাইনি হিসেবে নারীদের পুড়িয়ে
মারার ঘটনা কিছুকাল আগেও ভারতের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ঘটেছে। মানুষ বিশ্বাস করে যে,
ডাইনিরা ছোট শিশুদের ধরে নিয়ে গিয়ে হত্যা করে তাদের রক্ত পান করে।
দেও: দেও মানুষকে পানিতে ডুবিয়ে মারে। তাদেরকে কেউ কেউ
দানোও বলে।
পিশাচ: পিশাচরা মানুষের মাংসখোকো দানব। চিতা কিংবা
গোরস্তানে এদের বাস। রাত হলে এরা তাদের আস্তানা থেকে বের হয়। পিশাচরা মানুষকে
সম্মোহিত করতে পারে।

No comments