টেকসই উন্নয়ন কর্মসূচি কতটুকু টেকসই?
টেকসই উন্নয়ন কর্মসূচি কতটুকু টেকসই?
আলোচ্য বিষয়বস্তু
·
টেকসই উন্নয়নের পটভূমি ও ধারণা
·
টেকসই উন্নয়নের মূল লক্ষ্য
·
দারিদ্র্য এবং পরিবেশগত অবক্ষয়
·
টেকসই উন্নয়নের নীতিগত অপর্যাপ্ততা ও ত্রুটি
·
ধারণাগত দুর্বলতা
·
টেকসই উন্নয়ন অর্জনে প্রদত্ত নীতিসমূহ
টার্ম পেপারের আলোচ্য বিষয়বস্তু
‘টেকসই উন্নয়ন কর্মসূচী কতটুকু টেকসই?’টেকসই
উন্নয়নেরধারনা,সংজ্ঞা,উদ্দেশ্য,বিভিন্ন গবেষক ও গ্রন্থকার কর্তৃক এর
সমালোচনা,ধারণাগত দুর্বলতা,অর্জনে পরামর্শ সমূহ এই বিষয় গুলো আলোচনার মাধ্যমে এই
প্রশ্নের একটি যৌক্তিক উত্তর তুলে ধরা হবে।
গত কয়েক বছরে পরিবেশগত উন্নয়নের বিতর্কে নাটকীয় পরিবর্তন এসেছে।‘উন্নয়ন
এবং পরিবেশগত উদ্বেগ এরা কি পরস্পর বিরোধী?’এই প্রশ্নের পরিবর্তে বর্তমান আলোচনার
প্রশ্নটি হল কিভাবে টেকসই উন্নয়ন অর্জন করা যেতে পারে?টেকসই উন্নয়নের ধারণা ক্রমশই
ব্যাপ্তিশীল হয়ে পড়ে।আন্তর্জাতিক সাহায্য সস্থা,উন্নয়ন পরিকল্পনাবিদ,পরিবেশ ও
উন্নয়ন কর্মীদের নিকট এটি মূলমন্ত্র হয়ে উঠে।এই ধারণাটি ব্যাপক সমর্থিত হয় এবং
১৯৯০ এর দশকে এটি উন্নয়নের দৃষ্টান্ত হয়ে উঠে।
টেকসই উন্নয়ন ধারনার সূত্রপাত হয় ১৯৮০ সালে যখন The international Union for the conservation of nature and natural resource(IUCN) প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষনের মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন অর্জন সম্পর্কিত কৌশল
উপস্থান করে।টেকসই উন্নয়ন অর্জনকে
সমাজের মূল লক্ষ্য হিসেবে চিহ্নিত করার মাধ্যমে এই কৌশলটি উন্নয়নে আগ্রহী
সম্প্রদায় ও পরিবেশ আন্দোলনের সাথে ঐকমত্য তৈরি করতে সক্ষম হয়।
বিশ্ব ব্যাংক,এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংক,বিভিন্ন উন্নয়নমূলক সংস্থা এই
ধারণাটিকে স্বীকৃতি দিতে শুরু করে।টেকসই উন্নয়নের ধারণাটি গ্রহন করা হলেও এর
সজ্ঞায়নে অস্পষ্টতা থেকে যায়।এর তত্ত্বীয় কাঠামোগত অস্পষ্টতার জন্য এটি বোঝা কঠিন
হয়ে পড়ে যে টেকসই উন্নয়ন কি প্রকৃতপক্ষে পরিবেশগত উন্নয়ন সাধন করতে পারবে।এর
অর্থসংক্রান্ত ও ধারণাগত অস্পষ্টতা একটি বিতর্ক তৈরি করে।
টেকসই উন্নয়ন কি এই আলোচনায় উন্নয়ন এবং সক্ষমতা বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা থাকা
অত্যন্ত জরুরী।
উন্নয়ন কি
উন্নয়ন কি এই প্রশ্নের উত্তর গত চার দশক ধরে খোঁজা হচ্ছে।কেউ কেউ
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কে উন্নয়ন হিসেবে বিবেচনা করে আবার কারো নিকট সামাজিক
অধিকারের নিশ্চয়তাই উন্নয়ন।উন্নয়নকে আবার সরাসরি পরিবর্তনের উপায় হিসেবেও ধরা
হয়।এক্ষেত্রে দুটি বিষয় উল্লেখযোগ্য-
১।এই প্রক্রিয়ার উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য
২।লক্ষ্য অর্জনের মাধ্যম
উন্নয়নকে সাধারনভাবে সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিবর্তন হিসেবে ও মনে করা
হয়।তবে এই আলোচনা পরিপূর্ণ হয়না যদি না এই পরিবর্তনের উদ্দেশ্য বর্ণনা করা হয়।নয়া
ধ্রুপদী অর্থনীতিতে এই পরিবর্তনের উদ্দেশ্য হিসেবে সামাজিক কল্যাণ বৃদ্ধির কথা বলা
হয়েছে।
সক্ষমতা
টেকসই বিশেষণ টি ‘সফলতা’ এর পরিবর্তে ও ব্যবহার করা হয়ে থাকে।আর সক্ষমতা
মূলত নবায়নযোগ্য সম্পদের প্রসঙ্গে ব্যবহার করা হয়ে থাকে যা পরিবেশগত আন্দোলনের
স্লোগান হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।সক্ষমতা বলতে,পরিবেশকে কাজে লাগিয়ে মানব সমাজ এবং
ভবিষ্যত প্রজন্মের কল্যাণের প্রক্রিয়াকে মনে করা হয়।যাকে পরিবেশগত সক্ষমতা হিসেবে
মনে করা হয়।
সক্ষমতাকে কেউ কেউ সামাজিক দৃষ্টিকোণ হতেও সজ্ঞায়িত করেন।সামাজিক সক্ষমতা
বলতে,সামাজিক বিশ্বাস,মূল্যবোধ,প্রথা,ঐতিহ্য এগুলোকে বজায় রাখার সামর্থ্যকে বোঝায়।
টেকসই উন্নয়ন
টেকসই উন্নয়নের বহু সজ্ঞা রয়েছে।এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযগ্য হল,The world Commission on Environment and Development(WCED) কর্তৃক প্রকাশিতBruntdland reportএরপ্রদত্ত সজ্ঞা।যেখানে বলা হয়,টেকসই
উন্নয়ন হল এমন ধরণের উন্নয়ন যা বর্তমান চাহিদা পূরন করে ভবিষ্যত প্রজন্মের
প্রয়োজনীয়তা হ্রাস না করে।
১৯৮০ সালে IUCN কর্তৃক টেকসই উন্নয়নের ধারণায় এর পাঁচটি মূল লক্ষ্যের
কথা উল্লেখ করে-
·
প্রাকৃতিক সম্পদকে কাজে লাগিয়ে উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করা।যেখানে মূল লক্ষ্য
হবে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কল্যাণ সাধন।
·
অপ্রচলিত ও মূল্য কার্যকর সম্পদের ব্যবহার।
·
রাষ্ট্র ও জাতি গুলোকে আত্মনির্ভশীল করে তোলা যেন তারা নিজেদের সম্পদ
ব্যবহারের মাধ্যমে উন্নয়ন করতে পারে।
·
কোন গোষ্ঠী বা কিছু শ্রেনির উন্নয়ন নয় বরং সামগ্রিক উন্নয়নের দিকে
দৃষ্টিপাত করা।
·
শুধু আর্থিক উন্নয়ন নয়,জনসাস্থ্যের বিষয়টি ও গুরুত্ব দেওয়া।
লেলে টেকসই উন্নয়নের ধারণাটি নকশার সাহায্যে ব্যাখ্যা করেছেন।যেখানে তিনি
সক্ষমতার দিকমাত্রা,উন্নয়নের উদ্দেশ্য,প্রক্রিয়া,প্রবৃদ্ধি,মৌলিক চাহিদা,সামাজিক ও
পরিবেশগত অবস্থা এবং এগুলোর পারস্পরিক সম্পর্ক দেখিয়েছেন।
দারিদ্র্য মোকাবেলা
দারিদ্র্য একটি বৈশ্বিক সমস্যা।তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর উন্নয়নের প্রধান
অন্তরায় এটি।বিশ্ব ব্যাংকের উন্নয়ন রিপোর্ট অনু্যায়ী,এমন একটি বিশ্বের ধারণা করা
যেখানে প্রত্যেকটি দেশ অর্থনৈতিক ভাবে সমৃদ্ধ হবে এটি একটি ভ্রম মাত্র।২০০০ সালে
তাদের একটি পরিসংখ্যানে দেখা যায়,বিশ্বব্যাপী মোট জিএনপির পরিমাণ ২৮,৮৬২ ট্রিলিয়ন
যার মধ্যে নিম্ন আয়ের দেশগুলোর মাত্র ৬.৪ শতাংশ।ভারত এবং চায়নাকে বাদ দিলে এই
পরিমাণ মাত্র ১.৭ শতাংশ।বিশ্বের সবচেয়ে হতদরিদ্র দেশগুলোর জিএনপির ৯৩ শতাংশই
ঋন।ব্রুনাই,কম্বোডিয়া,কংগো,আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র,মালি,নেপাল,নাইজেরিয়া,ইয়েমেন
প্রজাতন্ত্র-এই দেশগুলোর বার্ষিক মাথাপিছু আয় ৩০০ ডলারের ও কম।সল্পোন্নত দেশগুলোর
মাত্র ৪১ শতাংশ মানুষ সুপেয় পানি পান করতে পারছে।বাংলাদেশে এই হার ২৬ শতাংশ।উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রায় ৫৬ শতাংশ শিশু
অপুষ্টিজনিত সমস্যায় ভুগছে।সাক্ষরতার পরিমাণ নারীদের ক্ষেত্রে মাত্র ৩৮ শতাংশ এবং
পুরুষের ৫৯ শতাংশ।নেপালে নারীদের ক্ষেত্রে এই হার মাত্র ৭ শতাংশ এবং ভুটানে ১২
শতাংশ।টেকসই উন্নয়নের ধারনাটি দারিদ্র্য দূরীকরণের কার্যকর পন্থা হিসেবে
সমাদৃত হয়েছিল কিন্তু এই পরিসখ্যান দেখে
বোঝা যাচ্ছে দারিদ্র্য আসলে কতখানি দূর হয়েছে।
পরিবেশ অবক্ষয় মোকাবেলা
পরিবেশবিদগণ টেকসই উন্নয়নের যে সমালোচনা করেছেন সেখানে তৃতীয় বিশ্বের
পরিবেশগত সংকটের চিত্র তুলে ধরেছেন। ১৯৬০ ও ৭০ এর দশকে পরিবেশগত সমস্যা পরিবেশবিদ
দের নিকট উদ্বেগের কারণ ছিল এবং টেকসই উন্নয়নের বিতর্কে একটি মূল উপাদান হয়ে
উঠে।বিংশ শতাব্দীর শেষ দিক বিভিন্ন গবেষণা ও প্রবন্ধে পরিবেশগত অবক্ষয়ের বিষয়টি
ব্যাপক ভাবে উঠে আসে।জলবায়ু পরিবর্তন,বন উজাড়,গ্রীণ হাউজ প্রভাব এগুলো প্রকট হয়ে
উঠে।বিশ্ব জলবায়ু সংস্থা ১৯৭৮ সালে গ্রীন হাউজ সমস্যা মোকাবেলায় জেনেভায় একটি
সম্মেলনের আয়োজন করে।বিশ্ব ব্যাংকের এক জরিপে দেখা যায়,প্রতি বছর বিশ্বের প্রায় ২
কোটি শিশু দূষিত পানি পান করে মৃত্যু বরণ করছে।
বাস্তব চিত্র যখন এমন তখন কি করে পরিবেশগত টেকসই উন্নয়ন সম্ভব এই প্রশ্ন
থেকেই যায়।
টেকসই উন্নয়ন ধারনাটির শুরু থেকেই পরিবেশ সম্প্রদায় গুলোর মধ্যে এ নিয়ে
সংশয় তৈরি হয়।Bruntdland report(১৯৮৭)এ বলা
হয়েছিল, টেকসই উন্নয়ন অর্জন করতে
হলে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক পণ্যের উৎপাদন ৫-১০ গুন বাড়াতে হবে।এই বক্তব্যকেই
কেন্দ্র করেই অনেক সমালোচনা হয়েছে।
১৯৯২ সালে টেকসই উন্নয়ন ধারনাটির একটি সমালোচনা মূলক
প্রবন্ধ প্রকাশিত হয় Porbe post নামক
একটি এন.জি.ও প্রকাশনায়।সেখানে গিবসন টেকসই
উন্নয়ন ধারনার তিনটি মূল সমালোচনার কথা উল্লেখ করেন-
১।অস্পষ্টতা
২এটি প্রতারকদের প্রলুব্ধ করে।
৩।বিভ্রান্তিমূলক
১২ বছর পর জন রবিনসন এই সমালোচনা গুলোর তৎকালীন যোক্তিকতা ব্যাখ্যা
করেছেন।
অস্পষ্টতাঃ টেকসই উন্নয়ন কি??
টেকসই উন্নয়ন ধারনাটির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল,এটি ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তি ও
সংস্থার কাছে ভিন্ন ভিন্ন অর্থ প্রকাশ করে।এর মধ্যে এক পক্ষ টেকসই উন্নয়নের ভিত্তি
হিসেবে পরিবেশগত,সামাজিক ও অর্থনৈতিক এই তিনটি বিষয় গুরুত্ব দিয়ে থাকে।অপর পক্ষ
মানুষ ও প্রকৃতির মধ্যকার সম্পর্ককে গুরুত্ব দিয়ে থাকে।এই অস্পষ্টতা টেকসই
উন্নয়নের রাজনৈতিক,প্রাতিষ্ঠানিক এবং অন্যান্য বিষয় গুলোতে ও সংশয় তৈরি করে।
কপটতাঃ নকল সবুজায়ন
এখানে এটি গুরুত্বপূর্ন নয় যে,কিভাবে নীতি অনুযায়ী টেকসই উন্নয়ন কে
সংজ্ঞায়িত করা যায়।বরং এটি বাস্তবায়নে কিভাবে একে পরিমাপ করা যায় সেটি জরুরী।একটি
পণ্য সবুজ/পরিবেশবান্ধব/সামাজিকভাবে দায়ী এই দাবিকে আমরা কিভাবে মূল্যায়ন করতে
পারি?কোন ধরনের নির্ণায়ক ব্যবহার করা যেতে পারে?আবাসস্থল ধ্বংস বনাম গ্রীনহাইজ
গ্যাস নির্গমন অথবা উন্নয়নশীল দেশগুলোতে অন্যায় শ্রমনীতি প্রয়োগের বিরুদ্ধে কিভাবে
তুলনা ও পরিমাপ করা যেতে পারে।পণ্যের অনুমোদিত লেবেলিং এর জন্য শিল্প প্রতিষ্ঠান
কর্তৃক একটি সুসংহত আন্দোলোন সংঘটিত হয়েছিল যার উদ্দেশ্য ছিল একটি সংঘবদ্ধ শিল্পের
উদ্ভব।যদিও এই বিষয় গুলো পরিবেশগত ও সামাজিক উন্নয়নের নিশ্চয়তা দিতে পারেনি তবে স্বল্প
সময়ের মাঝে একটি লক্ষণীয় উন্নয়ন তুলে ধরে।এটি ভাবা কঠিন যে,পন্যের লেবেলিং এবং
অনুমোদন ব্যবস্থার উন্নয়ন ব্যতীত একটি অধিক টেকসই সমাজের রূপান্তর সম্ভব।
বিভ্রান্তিঃভুল এজেন্ডার দিকে চালিত করে
টেকসই উন্নয়ন ধারণাটি কি আমাদের ভুল এজেন্ডার প্রতি দৃষ্টিপাত করার
মাধ্যমে প্রকৃত কারণ ও সম্ভাব্য সমাধান হতে আমাদের দৃষ্টি অন্যত্র সরিয়ে নেয়?
বায়োফিজিক্যাল দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী প্রধান সমস্যাটি হল টেকসই উন্নয়ন
সম্পূর্ণরূপে মানবকেন্দ্রিক।এতে চরমপন্থী ও সংস্কারবাদী দুটো ব্যবস্থাই
বিদ্যমান।পরিশেষে এই বিতর্ক দুটো বিষয়ের মধ্যে পার্থক্যে রূপ নেয়।মানব সমাজের কল্যাণের দিকে দৃষ্টিপাত এবং প্রকৃতির
ও মানব সম্পর্কের মধ্যে দৃষ্টিপাত।টেকসই উন্নয়নের ধারনাটি ক্ষমতা,শোষণ,পুনর্বন্টণ
এই বিষয় গুলো এড়িয়ে গিয়েছে।সেই সাথে মোলিক সামাজিক ও রাজনৈতিক অধিক পরিবর্তনের বিষয়গুলো
ও এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে।এতে এমন বিষয় গুলো প্রস্তাব করা হয় যা বিদ্যমান সুবিধা ও
ক্ষমতাকে কোনরূপ চ্যালেঞ্জ করেনা। টেকসই উন্নয়নের মন্ত্র আমাদের প্রকৃত সামাজিক ও
রাজনৈতিক পরিবর্তন গুলো হতে দৃষ্টি সরিয়ে রাখে যা মানব কল্যান বিশেষ করে দরিদ্র
জনগোষ্ঠীর কল্যাণের জন্য প্রয়োজন।এটি যেন শুধু রোগের উপসর্গ সারিয়ে ব্যাধি
চিরস্থায়ী করে তোলা।
টেকসই উন্নয়ন সম্পর্কিত গত কয়েক বছরের উন্নয়নের দিকে লক্ষ্য করলে এর কোন
সুস্পষ্ট নিদর্শন পাওয়া যাবেনা। বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নয়ন সাধিত হয়েছে।নতুন নতুন
ধারণার ও উদ্ভব হয়েছে।কিন্তু সমন্বিত রূপে একটি সার্বিক উন্নয়ন গড়ে উঠেনি।
বিভ্রান্তিঃপরস্পর বিরোধী যুক্ত
টেকসই উন্নয়নের সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয়টি হল,এটি বিভ্রান্তিকে উৎসাহিত করে।Bruntdlandরিপোর্টে যে বলা হয়েছে,পরিবেশগতভাবে টেকসই উপায়ে পণ্যের উৎপাদন ৫-১০ গুণ বাড়ানোর জন্য।এটি আসলেই
সম্ভব কিনা।একদল পরিবেশ বিজ্ঞানীর মতে,উৎপাদনের সীমাগুলো প্রকৃত ও যথার্থ।যদি তাই
হয় তবে উৎপাদন বহু গুণে বৃদ্ধি করা যাবে এই বক্তব্যটি ভিত্তিহীন।প্রবৃদ্ধির সীমা
বায়োফিজিক্যাল সীমা ও মানব কর্মক্ষমতার পরিমাপের সাথে সম্পর্কিত।এটি প্রবৃদ্ধির
সামাজিক সীমার দিকে অধিক দৃষ্টিপাত করে।বায়োফিজিক্যাল এবং সামাজিক উভয় বিতর্কেই
প্রবৃদ্ধি রোধের বিষয়টি রয়েছে।
বায়োফিজিক্যাল দিক হতে,গত দশকে পরিবেশগত বিভিন্ন নতুন ধারণার সৃষ্টি হয়েছে
কিন্তু এর বাস্তব প্রয়োগের উদাহরণ খুবই সীমিত।
রবিনসনের ন্যায় লেলে ও টেকসই উন্নয়ন ধারনাটির সমালোচনা করেছেন এবং এর কিছু
দুর্বল দিক চিহ্নিত করেছেন।
তিনি তিনটি বিষয়ে এর দুর্বলতার কথা বলেছেন-
১।দারিদ্র্য ও পরিবেশগত অবনতি এই বিষয়গুলোকে কিভাবে তুলে ধরা হচ্ছে।
২।উন্নয়ন,সক্ষমতা,অংশগ্রহন এই বিষয়গুলোকে কিভাবে দেখানো হচ্ছে।
৩।অপর্যাপ্ত জ্ঞান ও অনিশ্চয়তার মুখে এটি যেসব কৌশল গ্রহন করছে।
দারিদ্র্য এবং পরিবেশ অবক্ষয়ঃএকটি অসম্পূর্ন
বৈশিষ্ট্য প্রদান
টেকসই উন্নয়ন ধারনাটির মূল ভিত্তিই হচ্ছে দারিদ্র্য এবং পরিবেশ অবক্ষয়ের
মধ্যকার দ্বিমুখী সম্পর্ক।এই বিষয়টি নিয়ে সামাজিক ও পরিবেশ পর্যায়ে অনেক গবেষণা
হয়েছে।এই দুটি বিষয়ের মধ্যে জটিলতা ও পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও এগুলো পরস্পর
নির্ভরশীল।এখানে ব্যবস্থাপনাগত সক্ষমতা,অপর্যাপ্ত প্রযুক্তই,মূল্য ও ভর্তুকি
নীতি-এই উপাদান গুলোকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়।
![]() |
এখানে দেখানো হয়েছে,দারিদ্র্য এবং পরিবেশগত অবক্ষয় পরস্পর নির্ভরশীল।
এখানে উল্লেখ্য বিষয়গুলোর পারস্পরিক সম্পর্ক দেখানো হয়েছে।
ধারণাগত দুর্বলতা
দারিদ্র্য দূরীকরণ,সক্ষমতা ও অংশগ্রহন এই তিনটিকে টেকসই উন্নয়নের ভিত্তি
হিসেবে ধরা হলেও তাতে ত্রুটি রয়েছে।দারিদ্র্য দূরীকরণ ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে মূল
লক্ষ্য হিসেবে ধরা হয়েছে।এছাড়া সক্ষমতা ও অংশগ্রহনের ধারণাকে দুর্বল ভাবে ব্যাখ্যা
করা হয়েছে।যেমনঃএকটি নির্দিষ্ট প্রকল্প কি টেকসই উন্নয়নের একটি সুনির্দিষ্ট বিষয়কে
তুলে ধরছে?কোন ধরনের অংশগ্রহন কোন ধরনের ফলাফলের দিকে নিয়ে যাবে।
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ভূমিকা
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকেই টেকসই উন্নয়নের একমাত্র কারণ হিসেবে ভাবার বিষয়টি
প্রথম থেকেই সমালোচিত হয়ে এসেছে।অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি পরিবেশগত সক্ষমতার সাথে
সম্পর্কিত না হলে একে টেকসই উন্নয়নের কার্যকর লক্ষ্য হিসেবে মনে করা
অযৌক্তিক।পরিবেশগত অবক্ষয়ের জন্য দারিদ্র্য অনেকাংশে দায়ী।তাই সক্ষমতা অর্জনে দারিদ্র্য
দূর করতে হবে।প্রবৃদ্ধির মান পরিবর্তন করা এবং পরিবেশের যেন কোনরূপ ক্ষতি না হয়
সেটি নিশ্চিত করা।অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি দারিদ্র্য দূর করতে পারবে না যতক্ষন না
মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা যায়।
সক্ষমতা
পরিবেশগত সক্ষমতার জন্য তিনটি নীতির প্রস্তাব করা হয়-
১।পরিবেশ সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া ও লাইফ সাফোর্ট ব্যবস্থা।
২।জেনেটিক বৈচিত্র সংরক্ষন
৩।বিভিন্ন প্রজাতি ও সম্পদের টেকসই ব্যবহার।
সক্ষমতার আলোচনায় এই প্রশ্নগুলো চলে আসে যে কোন কোন ক্ষেত্রে টেকসই উন্নয়ন
করা হবে,কার জন্য করা হবে এবং কতটুকু।যেমনঃভবিষ্যত প্রজন্মের কথা চিন্তা করে নাকি
বন্যপ্রানী সংরক্ষনে।জনস্বাস্থ্য নাকি বর্তমান চাহিদা নিশ্চিত করা।এই প্রশ্নগুলোর
উত্তর পেতে প্রথমে সামাজিক ও পরিবেশগত সক্ষমতার মধ্যে পার্থক্য নিরূপণ করতে
হবে।এরপর পরিবেশগত ক্ষেত্রে নবায়নযোগ্য এবং অনবায়নযোগ্য সম্পদ চিহ্নিত করতে
হবে।কোন বিষয় গুলো মানব উন্নয়নে সহায়ক সেগুলো খুঁজে বের করতে হবে।
পরিবেশগত সক্ষমতায় সামাজিক বিষয়গুলো এড়িয়ে গেলে চলবে না।অবকাঠামোগত
বিষয়(পরিবহণ,যোগাযোগ),সেবা খাত(স্বাস্থ্য,শিক্ষা)এবং সাংস্কৃতিক বিষয়সমূহ ও
এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ন।তাই সামাজিক এবং পরিবেশগত সক্ষমতার মধ্যে পার্থক্য নেই,বরং
একটি অন্যের পরিপূরক।
অংশগ্রহন
টেকসই উন্নয়নের শুরুর দিকের কিছু গবেষণা ও প্রবন্ধে নিরপেক্ষতা ও সামাজিক
ন্যায়বিচারের বিষয়টিকে জোর দেওয়া হয়েছে।১৯৮৬ সালে IUCN অটোয়াতে তাদের সম্মেলনে ‘টেকসই ও ন্যায়সঙ্গত উন্নয়ন’ এই টার্মটি ব্যবহার
করে।কিন্তু মূলধারার টেকসই উন্নয়নে
স্থানীয় অংশগ্রহণকে অধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়।
এক্ষেত্রে তিন ধরনের সমস্যা দেখা যায়-
অংশগ্রহন ও বিকেন্দ্রীকরণ পরস্পর সমকক্ষ এবং নিরপেক্ষতা ও সামাজিক
ন্যায়বিচারকে প্রতিস্থাপন করতে পারে।এটি স্পষ্ট যে নিরপেক্ষতা ও সামাজিক
ন্যায়বিচার অর্জনে অংশগ্রহন প্রয়োজনীয় হলেও তা পর্যাপ্ত নয়।
দ্বিতীয়ত মূলধারার টেকসই উন্নয়নের প্রবক্তাগন অংশগ্রহণকে যেভাবে ব্যাখ্যা
করেছেন তা সংকীর্ণ ও বিভ্রান্তিমূলক।Cohen and
Uphoff(1980) অংশগ্রহনে চার ধরণের পার্থক্য তুলে ধরেছেন-সিদ্ধান্ত
তৈরি,রূপায়ন,সুবিধাজনক বণ্টন ও মূল্যায়ন।কিন্তু টেকসই উন্নয়নের অধিকাংশ প্রবক্তাগণ এই বিষয় গুলোতে পার্থক্য করেনি।
তৃতীয়ত,এরুপ একটি অনুমান রয়েছে যে অংশগ্রহন,নিরপেক্ষতা ও সামাজিক
ন্যায়বিচার পরিবেশগত সক্ষমতা দৃঢ় করবে। কিন্তু
এটি টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করবে না যতক্ষন না সম্পদ ব্যবস্থাপনার জন্য নতুন
প্রতিষ্ঠান তৈরি ও পরিচর্যা না হয়ে থাকে।
টেকসই উন্নয়নের নীতিগত অসঙ্গতি ও অপর্যাপ্ততা
লেলের মতে
টেকসই উন্নয়নের নীতি এবং ধারনা আমাদের সামাজিক ও পরিবেশগত যথার্থ উন্নয়নের
ব্যাপারে ঐকমত্যর ধারনা দেয়না।বরং ব্যক্তিগত,সাংগঠনিক,রাজনৈতিক বিষয় গুলো বেশী
প্রতিয়মান করে তোলে।
এক্ষেত্রে
তিনি টেকসই উন্নয়নের তিনটি বিষয় হতে উদাহরণ দিয়েছেন-
১।আন্তর্জাতিক
বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক
২।কৃষি
ব্যবস্থা
৩।ক্রান্তীয়
বনভূমি
আন্তর্জাতিক
বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সম্পর্কঃবানিজ্য,বহুজাতিক কোম্পানি,ঋন এবং অনুদান এই চারটি
বিষয়ের উপর ভিত্তি করেই বর্তমানে আন্তর্জাতিক বানিজ্য ব্যবস্থা পরিচালিত হচ্ছে।
টেকসই
উন্নয়নের আন্তর্জাতিক বানিজ্যের বিষয়টি দুই ভাবে ত্রূটিপূর্ণ।
ঋণ
অবাধ বানিজ্য
ঋণঃবিভিন্ন বৈশ্বিক সংস্থা যেমন
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল(আই.এম.এফ),বিশ্বব্যাংক তৃতীয় বিশ্বের দেশ গুলোকে ঋণ দিয়ে থাকে।কিন্তু এই ঋনের
শর্ত হিসেবে তারা ঐ সকল দেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক কাঠামো ঠিক করে দেয়।ফলে ঋণের
বিনিময়ে বাধ্য হয়ে তাদের এসব শর্ত মেনে নিতে হয়।ফলে তারা নিজেদের কাঠামোগত ভাবে
পরিবর্তন করতে পারেনা।প্রশ্ন থেকেই যায়,তারা কিভাবে টেকসই উন্নয়ন অর্জন করবে।
অবাধ বানিজ্যঃবিশ্বব্যাপী যে অবাধ বাণিজ্য
ব্যবস্থা গড়ে উঠছে তা টেকসই উন্নয়নের জন্য সংকটপূর্ন।অবাধ বা মুক্ত বানিজ্যের ফলে
বিশ্বের সবগুলো দেশ সমান ভাবে লাভবান হচ্ছে না।এর ফলে ধনী দেশগুলো অধিকতর ধনী
হচ্ছে এবং দরিদ্র দেশগুলো আর ও বেশি দরিদ্র হচ্ছে।মিশেল রেডক্লিফট তার ‘ The sustainable development :exploring the contradictions’বইয়ে
বলেন,নয়া ধ্রুপদী অর্থনীতিতে এটি স্বীকার করা হয়েছে,অবাধ বানিজ্যের ফলে প্রাপ্ত
মুনাফা সকল দেশ সমূহের মাঝে সুষম ভাবে বন্টিত হয়না।
১৯৮৭ সালে
লন্ডনে World commission on environment and development(WCED) একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেন যেখানে বলা হয়, ‘সংরক্ষনবাদ’ হল টেকসই উন্নয়নের
প্রধান অন্তরায় এবং এতে সংরক্ষণবাদের সমালোচনা করে মুক্ত বাজার ব্যবস্থা গড়ে তোলার
কথা বলা হয় যা টেকসই উন্নয়নের জন্য ত্রুটিপূর্ন ছিল।সম্প্রতি অক্সফাম এর একটি
গবেষণায় দেখা গিয়েছে,পৃথিবীর প্রায় অর্ধেক সম্পদ কেবল মাত্র ১ শতাংশ লোকের
মালিকানায় রয়েছে।
তুলনামূলক সুবিধা তত্ত্বঃএই আলোচনায়
তুলনামূলক সুবিধা তত্ত্বের বিষটি ও এসেছে।এই তত্ত্ব অনুযায়ী,একটি রাষ্ট্রের সে সকল
দ্রব্য উৎপাদন করা উচিত যেগুলো উৎপাদনে তারা দক্ষ,উৎপাদনের অনুকূল পরিবেশ
বিদ্যমান।এর ফলে একটি রাষ্ট্র উৎপাদনের অন্যান্য ক্ষেত্র গুলোতে অবদান রাখতে
পারছেনা।ফলে সক্ষমতা অর্জন সম্ভব হচ্ছে না।
২।কৃষিব্যবস্থাঃকৃষি মানব সমাজের অন্যতম প্রধান
ভিত্তি হিসেবে বিবেচিত হয়।পরিবেশগত সক্ষমতা অর্জনে তাই কৃষির উপর জোর দেওয়া
হয়েছে।কিন্তু তারপর ও এটি ত্রুটিপূর্ন বলে সমালোচিত হয়েছে।
এখানে টেকসই
কৃষি,লো ইনপুট এ্যাগ্রিকালচার,অর্গানিক ফার্ম কে প্রতিস্থাপনযোগ্য বলা হলে ও
প্র্রকৃতপক্ষে এগুলোর মধ্যে পার্থক্য রয়েছে।
এ্যাগ্রো
ইকোলজি কে টেকসই উন্নয়নের প্রধান মাধ্যম বলা হলেও এর তত্ত্বীয় এবং প্রায়োগিক
গঠনকাঠামো সুস্পষ্ট ভাবে ব্যাখ্যা করা হয়নি।
কৃষিতে
উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমেই সক্ষমতা অর্জন সম্ভব এটিই বলা হয়েছে বার বার কিন্তু এ যেন
পুরাতন ধারনাকেই নতুন করে বলা।কিভাবে এটি বাস্তবায়ন সম্ভব সেই বিষয়ে আলোকপাত করা
হয়নি।
এখানে
পরস্পর বিরোধী ধারনা ও প্রকাশ করা হয়েছে।WCEB রিপোর্টে বলা হয়েছে,ভূমির উর্বরতা হ্রাস এবং পরিবেশ দূষণের মধ্যে দিয়েই
কৃষিতে উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে।সেখানেই আবার বলা হয়েছে,রাষ্ট্র সমূহের কৃষিজ উৎপাদন
বৃদ্ধির জন্য রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার প্রয়োজন।
৩।ক্রান্তীয় বনভূমিঃবনভূমি নিধন বহু
বছর ধরেই একটি উদ্বেগের কারণ ছিল।বন্যপ্রানী ও পরিবেশ সংরক্ষনে বনভূমি রক্ষায় একটি
সুসংহত আন্দোলন ও গড়ে উঠেছিল।
কিন্তু
ওয়াল্ড রিচোর্চ ইন্সটিটিউট,বিশ্ব ব্যাংক এবং FAO
বনভূমি সম্পর্কিত যে এজেন্ডা(১৯৮৫)প্রকাশ করে তা অযৌক্তিক বলে সমালোচিত হয়।সেখানে
বনভূমি বিনাশের প্রধান কারণ হিসেবে দারিদ্র্য,অধিক জনসংখ্যা ও অজ্ঞতাকে দায়ী করা
হয়েছে।প্রথমত,এখানে দরিদ্রদের বলির পাঠা করার মাধ্যমে এর কারণ যেমন এড়িয়ে যাওয়া
হয়েছে তেমনি এর প্রকৃত কারণ সম্পর্কে দৃষ্টিপাত অন্যত্র সরিয়ে রাখা
হয়েছে।দ্বিতীয়ট,এই এজেন্ডার মাধ্যমে এই বিষয়টি অস্বীকার করা হয়েছে যে পৃথিবীর
সবচেয়ে সুরক্ষিত বনভূমি গুলো স্থানীয় জনগণের দ্বারাই সংরক্ষিত ছিল যারা কিনা
দরিদ্র জনগোষ্ঠী।এই এজেন্ডা বিদ্যমান পরিস্থিতি অক্ষুণ্ণ রাখতেও বৈধতা প্রকাশ
করে।এই এজেন্ডা এর পরিবর্তে বনভূমি বিনাশের সমস্যা গুলো সামাজিক ও পরিবেশগত দিক
হতে বিশ্লেষণ করতে পারত।
লেলের
মতে,টেকসই উন্নয়ন যদি ৫০ শতাংশ অর্জন ও সম্ভব হয় তবে দারিদ্র্য এবং পরিবেশ অবক্ষয়
অভূতপূর্ব হারে হ্রাস পাবে।
এক্ষেত্রে টেকসই উন্নয়নের প্রবক্তা ও বিশ্লেষকদের তিনি কিছু বিষয়ের উপর
দৃষ্টিপাত করতে পরামর্শ দিয়েছেন-
·
ভিন্ন ধরনের
সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে কোন ধরনের সম্পদের ব্যবহার প্রয়োজন তা চিহ্নিত
করা।
·
সক্ষমতার বিভিন্ন
দিকমাত্রা সম্পর্কে জানা এবং সেগুলো অর্জনে পর্যাপ্ত নীতি প্রয়োগ।
·
নয়া ধ্রুপদী
অর্থনীতির ত্রুটি,অপর্যাপ্ততা চিহ্নিত করা যেহেতু এটি পরিবেশ এবং বন্টন ব্যবস্থার
সাথে সম্পর্কিত।ভিন্ন ভিন্ন অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় এর প্রভাব কি ধরনের সেটি বিশ্লেষণ
করা।
·
শুধু অর্থনৈতিক
সমৃদ্ধিকেই টেকসই উন্নয়নের উপায় মনে না করা।অন্যান্য সম্পর্কিত বিষয় গুলোতে ও সমান
গুরুত্ব দেওয়া।
·
দারিদ্র্য এবং
পরিবেশগত অবক্ষয়ের পেছনে কাঠামোগত,সাংস্কৃতিক ও প্রযুক্তিগত কারণ রয়েছে এই বিষয়টি
মেনে নিয়ে এগুলোর কার্যকারণ অনুসন্ধান করা এবং সেগুলোতে প্রাতিষ্ঠানিক ও শিক্ষাগত
সমাধান প্রয়োগ করা।
জন রবিনসন প্রদত্ত টেকসই উন্নয়ন অর্জনে পরামর্শসমূহঃ
জন রবিনসন
টেকসই উন্নয়ন অর্জনে কিছু নীতিমালার উল্লেখ করেছেন-
·
টেকসই উন্নয়ন
বিভিন্ন ক্ষেত্র,বিভাগ ও মাপকাঠিতে একটি সুসংহত ধারনা হবেঃ
সক্ষমতার
তিনটি মূল স্তম্ভ বা ক্ষেত্র হচ্ছে-অর্থনীতি,সমাজ এবং পরিবেশ।তাই সক্ষমতা অর্জনে
এই তিনটি ক্ষেত্রেই সমভাবে উন্নয়ন প্রয়োজন।এই ক্ষেত্র গুলোর মধ্যে পারস্পরিক সংযোগ
তৈরি করতে হবে।উন্নয়নের নতুন ধারনা,পদ্ধতি সম্পৃক্ত করতে হবে যা সুসংহত ও সমন্বয়ী
হবে।শুধুমাত্র সমষ্টি নয়,ঐকমত্য ও সৃষ্টি করবে।
সরকারের
একার সেই ইচ্ছে বা ক্ষমতা নেই এটি অর্জন করার।বেসরকারি খাত গুলোকে ও সম্পৃক্ত হতে
হবে।সরকারি ও বেসরকারি খাতের কাজগুলো তত্ত্বাবধায়নে বিভিন্ন এন.জি.ও গুলো সম্পৃক্ত
হবে।
গবেষণা ও
শিক্ষা খাতকে এর সাথে যুক্ত করতে হবে।এমন নয় যে প্রত্যেক গবেষক,শিক্ষার্থীর সম্পৃক্ততা
প্রয়োজন।বরং পর্যাপ্ত প্রশিক্ষন ও অনুশীলনের মাধ্যমে এই খাতগুলোর উন্নয়নের মধ্য
দিয়ে দক্ষ ও মেধাবী জনগোষ্ঠী গড়ে তোলা।
এছাড়া
সামাজিক গ্রহনযোগ্যতা ও রাজনৈতিক নেতৃত্ববৃন্দের সহযোগিতা ও প্রয়োজন।
·
ধারণাগত প্রয়োগঃ
টেকসই
উন্নয়ন বিষয়ে নানা তত্ত্বীয়,পদ্ধতিগত আলোচনা ক্রমাগত হয়েই চলছে।কিন্তু এগুলো
সক্ষমতা অর্জন করতে পারবে না যতক্ষন না নতুন ধরনের সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট
বিবেচনা করা হবে এবং সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
·
প্রযুক্তিগত সংশোধন
প্রয়োজন তবে যথেষ্ট নয়ঃ
প্রযুক্তিগত
উন্নয়ন সকল রাষ্ট্র ভোগ করতে পারছেনা।পিছিয়ে পড়া দেশগুলোকে প্রযুক্তিগত ভাবে উন্নত
করতে হবে।তবে প্রযুক্তিগত সমাধানের উর্ধেধ যেয়ে বন্টন,ভোগ,ক্ষমতায়ন এই বিষয় গুলোতে
অধিক বিশ্লেষণ প্রয়জন।
·
বৈজ্ঞানিক
বিশ্লেষণঃ
বৈজ্ঞানিক
বিশ্লেষণ টেকসই উন্নয়নের অন্তরায় গুলো চিহ্নিত করতে সহায়ক।এর মাধ্যমে
পরিবেশগত,অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিষয়সমূহের জটিলতা গুলো বুঝতে হবে এবং এগুলোর
সমাধানে কি পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে সেই বিষয়ে অনুসন্ধান করতে হবে।তবে এক্ষেত্রে
তিনটি বিষয় লক্ষনীয়,
-বৈজ্ঞানিক
বিশ্লেষণ সক্ষমতার মৌলিক সমস্যা অভহিত করতে পারে,এর সমাধান নয়।
-গবেষণায়
প্রাপ্ত ফলাফল পুনরায় নিরীক্ষা করার জন্য উন্মুক্ত রাখা।এই ফলাফলকেই চূড়ান্ত
হিসেবে ধরে না নেওয়া।
-সক্ষমতার
আলোচনার জ্ঞানের অন্যান্য পরিধি ও গুরুত্বপূর্ন।
·
বিভিন্ন সম্প্রদায়কে সম্পৃক্ত করাঃ
টেকসই
উন্নয়নের বিতর্কে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন,সমস্যাটি কতটা গুরুত্বর।এর জন্য কি সংস্কার
প্রয়োজন নাকি বিপ্লব।
টেকসই উন্নয়ন
অর্জনে বিভিন্ন ক্ষেত্রের জনগোষ্ঠীকে সম্পৃক্ত করা একান্ত প্রয়োজন।
টেকসই
উন্নয়নের প্রদত্ত আলোচনা,সমালোচনা ও বিতর্ক হতে এই বিষয়টি প্রতীয়মান হয় যে,টেকসই
উন্নয়ন ধারণাটি কিছু উদ্দেশ্য নিয়ে শুরু হলেও সেগুলো বাস্তবতার মুখ খুব একটা দেখতে
পায়নি।দারিদ্র্য ও পরিবেশ অবক্ষয় এই দুটি সমস্যা বিশ্বব্যাপী এখন ও প্রকট।এছাড়া এর
ধারনাগত দুর্বলতা ও অস্পষ্টতা ব্যাপক ভাবে সমালোচিত হয়েছে।
তাই বলা
যায়,টেকসই উন্নয়ন কর্মসূচি আশানুরূপ ভাবে টেকসই হয়ে উঠতে পারেনি।
তথ্যসূত্র
·
LELE,S.M(1991) Sustainable
Development:A critical review on world development,vol.19(6) p. 607-621
·
Robinson,J(2004)Squaring the
circle:Some thoughts on the idea of Sustainable Development Ecological
Economics,48 P.369-384
·
Adams,W.M,The dilemma of
Sustainablility in
Green Development:Environment and
Sustainability in the third world

No comments