কাশ্মীর সংকট ও মিডিয়ার যুদ্ধ সাংবাদিকতা
কাশ্মীরের ইতিহাস
পঞ্চম শতাব্দী পর্যন্ত কাশ্মীরে হিন্দুধর্ম ও পরবর্তীতে বৌদ্ধধর্ম প্রভাব বিস্তার করে। নবম শতাব্দীতে গিয়ে কাশ্মীর উপত্যকায় শৈব ধর্মের উত্থান ঘটে। ১৩৩৯ সালে প্রথম মুসলিম শাসক শাহ মীরের হাত ধরে কাশ্মীরে ইসলামে বিস্তার হতে থাকে। এ সময় অন্যান্য ধর্মের প্রভাব হ্রাস পেলেও তাদের অর্জনসমূহ হারিয়ে না গিয়ে বরং মুসলিম অনুশাসনের সঙ্গে মিশে কাশ্মীরি সুফিবাদের জন্ম হয়। পরবর্তী সময়ে ১৮১৯ সাল পর্যন্ত অর্থাৎ প্রায় ৫০০ বছর মুসলিমরা কাশ্মীর শাসন করে। ১৮১৯ সালের শেষাংশে রঞ্জিত সিংহের নেতৃত্বে শিখরা কাশ্মীর দখল করে। ১৮৪৬ সালে কাম্মীরের তৎকালীন রাজা ইংরেজদের সঙ্গে যুদ্ধে হেরে গেলে রাজ্যটি ইংরেজদের হস্তগত হয়। তবে একটি চুক্তির মাধ্যমে গোলাব সিংহ ব্রিটিশদের কাছ থেকে ৭৫ লাখ রুপি এবং সামান্য বার্ষিক চাঁদার বিনিময়ে কাশ্মীর ক্রয় করেন এবং নতুন শাসক হন। ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত গোলাপ সিংহের বংশধরেরাই কাশ্মীর শাসন করেছেন।
রাজনৈতিক দ্বদ্বের সূচনা
১৯২৫ সালে কাশ্মীরের রাজা হন হরি সিংহ এবং ১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীন হওয়া পূর্ব পর্যন্ত তিনিই ছিলেন কাশ্মীরের শাসক। ভারত বিভাগের অন্যতম শর্ত ছিল, ভারতের দেশীয় রাজ্যের রাজারা তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী ভারত বা পাকিস্তানে যোগ দিতে পারবেন। আবার তারা যদি চান স্বাধীন থেকেও নিজেদের শাসনকাজ পরিচালনা করতে পারবেন। কিন্তু একটি বিষয় লক্ষ্যণীয় যে, হরি সিংহ ছিলেন হিন্দু রাজা, তিনি চাইছিলেন ভারতের সঙ্গে থাকতে। কিন্তু কাশ্মীরের জনসংখ্যার ৮৫ শতাংশই ছিল মুসলিম। জনগণের বিরাট একটি চাইছিল পাকিস্তানের সঙ্গে যোগ দিতে। এমনই এক দোলাচলে ১৯৪৭ সালের ২২ অক্টোবর পাকিস্তান সমর্থিত পাকিস্তানের পশতুন উপজাতিরা কাশ্মীর আক্রমণ করে।
ঘটনায় হরি সিংহের সঙ্গে পশতুনদের যুদ্ধ শুরু হলে কাশ্মীরের রাজা ভারতের তৎকালীন গভর্নর-জেনারেল লর্ড মাউন্টব্যাটেনের সহায়তা চান। বিনিময়ে হরি সিংহ ২৬ অক্টোবর এমন একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে যে তাতে উল্লেখ ছিল, হরি সিংহ ভারতের সঙ্গে যোগ দেবেন। চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হওয়ার পরই ভারতীয় সেনারা কাশ্মীরে প্রবেশ করে। অপরদিকে কাশ্মীরের পাকিস্তান প্রান্ত দিয়ে পাকিস্তানি সৈন্য প্রবেশ করে।
প্রায় চার বছর যুদ্ধ চলার পর ১৯৫২ সালে জাতিসংঘ যুদ্ধ বিরতি হয়। যুদ্ধ বিরতির প্রস্তাব অনুসারে কাশ্মীর থেকে উভয় দেশের সৈন্য প্রত্যাহার ও গণভোটের আয়োজনের কথা বলা হয়। ভারত প্রথমে সৈন্য প্রত্যাহার করতে রাজি হলেও গণভোট আয়োজনে অসম্মত হয়। ভারতের ধারণা ছিল, মুসলিম অধ্যুষিত কাশ্মীরে গণভোট দিলে তারা পাকিস্তানের পক্ষেই যোগ দেবে। অন্যদিকে পাকিস্তানও কাশ্মীর থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করতে রাজি হয় না। ফলে উভয় দেশেই তথন থেকে কাশ্মীরে সৈন্য মোতায়েন করে রেখেছে।
পরবর্তী সময়ে কাশ্মীর নিয়েই ১৯৬৫ সালে এবং ১৯৯৯ সালে দুই দেশের মধ্যে আবারও যুদ্ধ হয়।
ভারত কী চায়
১৯৪৯ সালের ১৭ অক্টোবর ভারতের সংবিধানে ৩৭০ ধারা সংযোজিত হয়। ওই ধারা অনুসারে প্রতিরক্ষা, বৈদেশিক সম্পর্ক ও যোগাযোগ ছাড়া অন্য কোনো বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকার কাশ্মীরে হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। একই সঙ্গে কাশ্মীরে নতুন আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রেও কেন্দ্রের কোনো ভূমিকা থাকবে না।
এ ছাড়া রাজ্যের স্থায়ী অধিবাসী ছাড়া সেখানে জমি ক্রয়, রাজ্যের চাকরিতে আবেদন ইত্যাদিও নিষিদ্ধ করা হয়। এমনকি জম্মু-কাশ্মীরের কোনো নারী রাজ্যের বাইরে কাউকে বিয়ে করলে তিনি সম্পত্তির অধিকার থেকে বঞ্চিত হতেন।
কাশ্মীরবাসীর প্রতি ভারতের সংবিধান যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল নানা অজুহাতে ধীরে ধীরে সেসব রহিত হতে থাকে। ১৯৯০ সাল থেকে ভারতের সেনাসহ বিভিন্ন নিরাপত্তা বাহিনী কাশ্মীরিদের ওপর নির্মম নির্যাতন চালিয়ে আসছে। কেন্দ্রীয় সরকারের বা ড়াবাড়ি ফলে ১৯৯৮ সালে সেখানে সশস্ত্র বিদ্রোহের জন্ম হয়। এ বিদ্রোহ দমন করতে গিয়ে নিরাপত্তা বাহিনী আরো কঠোর অবস্থানে যায়। ফলশ্রুতিতে আরো অশান্ত হয়ে ওঠে কাশ্মীর উপত্যকা।
যদিও বলা হয়ে থাকে, ভারতের জাতীয় কংগ্রেস বরাবরই ৩৭০ ধারা মেনে চলার ক্ষেত্রে তুলনামূলক নমনীয়তা দেখিয়েছে। তবে ক্ষমতাসীন বিজেপি বিগত নির্বাচনের সময়ই ঘোষণা করেছিল, তারা ক্ষমতায় গেলে ৩৭০ ধারা বাতিল করা হবে। মূলত সোমবার দেশটির রাষ্ট্রপতি বিশেষ আদেশের মাধ্যমে বিজেপির সেই পরিকল্পনাই বাস্তবে রূপ দিলেন।
এ বিষয়ে কাশ্মীরের কংগ্রেস নেতা গুলাম নবী আজাদ সাংবাদিকদের বলেছেন, “বিশেষ মর্যাদা বাতিল করে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ৩৫ (ক) ধারারাও বিলোপ করে দেওয়া হলো। এর মধ্য দিয়ে সরকার জম্মু-কাশ্মীরের জনগণের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করল। এর পরিণাম ভালো হতে পারে না।
কাশ্মীর নিয়ে পাকিস্তানের অবস্থান
১৯৪৭ সাল থেকেই পাকিস্তান মনে করে কাশ্মীর তাদের অংশ হওয়া উচিত এবং এ কারণেই ১৯৪৭ সালে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় পাকিস্তানের পশতুনরা কাশ্মীর দখলের চেষ্টা চালায়। কাশ্মীর নিয়ে পাকিস্তানের নীতি বুঝতে দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট জুলফিকার আলী ভুট্টোর জাতিসংঘে দেওয়া এক ভাষণই যথেষ্ঠ।
প্রায় ৪২ বছর আগে জুলফিকার আলী ভুট্টো জাতিসংঘে বলেছিলেন, “কাশ্মীর কখনোই ভারতের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ নয়, বরং এটি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার এক বিতর্কিত ভূখন্ড। আর কাশ্মীরের ওপর পাকিস্তানের দাবি সব সময়ই অনেক বেশি। কারণ রক্তে, মাংসে, জীবনযাপনে, সংস্কৃতিতে কিংবা ভূগোল আর ইতিহাসে তারা পাকিস্তানের মানুষের অনেক কাছের।”
ভুট্টোর এই ঘোষণার পর বহু বছর চলে গেছে, দেশটিতে এসেছে বহু শাসক, কিন্তু পাকিস্তানের ওই নীতির কোনো পরিবর্তন হয়নি।
ভারত সরকার কেন এই অনুচ্ছেদ বিলোপ করলো?
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং হিন্দু জাতীয়তাবাদী দল ভারতীয় জনতা পার্টি দীর্ঘসময় ধরে অনুচ্ছেদ ৩৭০ এর বিরোধিতা করে আসছে।
ঐ অনুচ্ছেদের বিলোপ দলের ২০১৯ সালের নির্বাচনি তফসিলের অংশও ছিল।
কাশ্মীরকে একত্রিত করা এবং ভারতের অন্যান্য রাজ্যের সাথে সমতা আনার জন্য ঐ অনুচ্ছেদের বিলোপ প্রয়োজন বলে যুক্তি দিয়ে আসছিল তারা।
এপ্রিল-মে মাসে হওয়া সাধারণ নির্বাচনে জয় পাওয়ার পর সরকার তাদের ঐ প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে একটুও দেরি করেনি।
ঐ অনুচ্ছেদ বিলোপের সমালোচকরা ভারতের অর্থনৈথিক প্রবৃদ্ধির গতি শ্লথ হয়ে যাওয়ার সাথে এই সিদ্ধান্ত নেয়ার সম্পর্ক থাকতে পারে বলে ধারণা প্রকাশ করেছেন। তাদের যুক্তি, এর ফলে সরকার একটি বিকল্প পথ তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে, যা অর্থনীতির গতি কমে যাওয়ার বিষয়টি থেকে মানুষের মনোযোগ সরিয়ে নিতে পেরেছে।
অনেক কাশ্মীরি মনে করেন, কাশ্মীরের বাইরের মানুষকে সেখানকার জমি কেনার বৈধতা প্রদান করে বিজেপি আসলে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ কাশ্মীরের জনতাত্বিক বৈশিষ্ট্য বদলাতে চায়।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ'র সোমবারের ঘোষণা অধিকাংশ ভারতীয়কে অবাক করলেও, এত বড় মাপের একটি সিদ্ধান্ত নিতে সরকারের নিশ্চিতভাবে যথেষ্ট পূর্বপ্রস্তুতি নিতে হয়েছে।
কাশ্মীর ও পাকিস্তান সংক্রান্ত ইস্যুতে মি. মোদি'র অবস্থান শক্ত - এই বিষয়টি প্রচার করতে চাওয়ার অভিপ্রায়ের সাথেও সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়েছে সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তটি। (বিবিসি, ৬ আগস্ট, ২০১৯)
কী চান কাশ্মীরের মানুষ
৩৭০ ধারা বাতিলের এই সিদ্ধান্তের পরিণাম কী হবে, এখনই তা বোঝা যাচ্ছে না। কারণ, গোটা উপত্যকায় জারি করা হয়েছে কারফিউ, এই মুহূর্তে থমথমে সব কিছু।
এর আগে ৩৭০ ধারা বাতিল হতে পারে এমন জল্পনায় রাজ্যের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি কেন্দ্রীয় সরকারকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছিলেন, রাজ্যের বিশেষ মর্যাদা নষ্ট করে দেওয়া হলে তা দেশের পক্ষে অমঙ্গলজনক হবে।
কাশ্মির নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অবস্থান
নাগরিক স্বাধীনতা ও মানবাধিকার পরিস্থিতিতে উদ্বেগ জানানো ছাড়া জম্মু ও কাশ্মিরের পরিস্থিতি নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় একেবারেই নীরব ভূমিকায় অবস্থান নিয়েছে। পশ্চিমাদের মধ্যে স্রেফ যুক্তরাষ্ট্র উদ্বেগ প্রকাশ করলেও মুসলিম বিশ্বের অবস্থান একেবারেই মৃতবৎ। কাশ্মিরের বিশেষ মর্যাদা বাতিলের পর ভারতের এই সাংবিধানিক পদক্ষেপকে চ্যালেঞ্জ করে কোনো দেশই এখন পর্যন্ত তেমন কিছু করেনি। অবস্থাদৃষ্টে বোঝা যাচ্ছে, কাশ্মির ইস্যুতে নয়াদিল্লির অবস্থানকে ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলেই মেনে নিয়েছে সবাই। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর বলেছে, তারা কাশ্মিরের যোগাযোগ ব্যবস্থা ও নাগরিক স্বাধীনতা সীমিতকরণ ও নিরাপত্তা বাহিনীর ব্যাপক সদস্য মোতায়েনে উদ্বিগ্ন। তবে ভারতের সাংবিধানিক পদক্ষেপ নিয়ে তারা মন্তব্য করেনি।
তবে যুক্তরাষ্ট্র সব পক্ষকে শান্ত ও সংযত হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছে (ভোরের কাগজ, ১০ আগস্ট, ২০১৯)।
মুসলিম বিশ্বের সংগঠন ওআইসিও কাশ্মির নিয়ে ভারতের পদক্ষেপের পর কোনো মন্তব্য করেনি। গত ৪ আগস্ট কাশ্মিরে যখন অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করছিল ভারত তখন সংস্থার পক্ষ থেকে স্রেফ নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে একটি বিৃবতি দেয়া হয়েছিল। কাশ্মিরের ‘বিশেষ মর্যাদা’ বাতিলের পর ওআইসি কিংবা পাকিস্তান ছাড়া কোনো মুসলিম দেশ এককভাবে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য বা নিন্দা প্রকাশ করেনি। তবে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন কাশ্মীর ইস্যু নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। চীনও কাশ্মীরের পক্ষে থাকার কথা বলেছে। যদিও তারা এ পর্যন্ত তেমন কিছুই করে নি।
তবে যুক্তরাষ্ট্র সব পক্ষকে শান্ত ও সংযত হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছে (ভোরের কাগজ, ১০ আগস্ট, ২০১৯)।
মুসলিম বিশ্বের সংগঠন ওআইসিও কাশ্মির নিয়ে ভারতের পদক্ষেপের পর কোনো মন্তব্য করেনি। গত ৪ আগস্ট কাশ্মিরে যখন অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করছিল ভারত তখন সংস্থার পক্ষ থেকে স্রেফ নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে একটি বিৃবতি দেয়া হয়েছিল। কাশ্মিরের ‘বিশেষ মর্যাদা’ বাতিলের পর ওআইসি কিংবা পাকিস্তান ছাড়া কোনো মুসলিম দেশ এককভাবে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য বা নিন্দা প্রকাশ করেনি। তবে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন কাশ্মীর ইস্যু নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। চীনও কাশ্মীরের পক্ষে থাকার কথা বলেছে। যদিও তারা এ পর্যন্ত তেমন কিছুই করে নি।
গালতুনের মডেল
তত্ত্বটি প্রদান করেন জোহান গালতুং। তিনি নরওয়ের একজন শান্তি বিজ্ঞানী, সমাজবিজ্ঞানী, গণিতবিদ। দ্বন্দ্ব ও সংঘাত নিরসনে তাঁর ধারণা, তত্ত্ব পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে প্রায় দেড়শ’র বেশি সংঘাতে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে তাঁর অভিজ্ঞতায় শান্তিকামীরা হয়েছিলেন আশান্বিত। তাঁর ধারণা অনুসারীরা পৃথিবীর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন নামে নতুন বিভাগ চালু করেন। তত্ত্বটিতে যুদ্ধ সাংবাদিকতার পার্থক্য তুলে ধরা হয়েছে। তা উপস্থাপন করা হলোঃ
শান্তি সাংবাদিকতা
|
যুদ্ধ সাংবাদিকতা
|
১) শান্তি / সংঘর্ষ সম্পর্কিত
ক) দ্বন্দের কারণ আবিষ্কার, বহুদলীয় ও অনেক উদ্দেশ্য এবং জয়-জয় নির্ভর
খ) দ্বন্দকে স্বচ্ছকরণ ও সব পক্ষের মতামত তুলে ধরা
গ) বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তদন্ত প্রতিবেদন করা
ঘ) দ্বন্দকে স্বীকৃতি ও মানবাধিকারকে গুরুত্ব দেওয়া ইত্যাদি।
|
১) যুদ্ধ নির্ভর
ক) দ্বন্দের ক্ষেত্র আলোচনা, এক পক্ষ, একটি উদ্দেশ্য বা জয় নির্ভর
খ) যুদ্ধের গোপনীয় রক্ষা করা এবং প্রোপাগান্ডা ছড়ানো
গ) আমি তুমি সাংবাদিকতা করা এবং প্রতিদিনকার সংবাদ তৈরি করা
ঘ) নিজেদের জয়ী হওয়ার দিকে নজর দেওয়া এবং যুদ্ধের জন্য অপেক্ষা করা।
|
২) সত্য নির্ভর
ক) সকল দিকের সত্য ও গোপন তথ্য প্রকাশ করা
|
প্রচারণা নির্ভর
ক) সত্য তথ্য প্রকাশ ও মিথ্যা ঢাকতে সাহায্য করা
|
৩) জনগ্ণ নির্ভর
ক) সকল প্রকার মানুষের ভোগান্তি তুলে ধরা
খ) সকল অন্যায়কারীর নাম প্রকাশ করা
গ) জনগণের শান্তি প্রতিষ্ঠায় গুরুত্ব দেওয়া
|
অভিজাত নির্ভর
\ক) নিজেদের তথা এলিটদের ভোগান্তি তুলে ধরা
খ) শ্ত্রুর নাম প্রকাশ করা
গ) উচ্চভৃত্তদের শান্তি প্রতিষ্ঠায় কাজ করা
|
৪) সমাধান নির্ভর
ক) শান্তি প্রতিষ্ঠায় গুরুত্ব দেওয়া উচিত যেখানে গুরুত্ব পায় গঠন, সংস্কৃতি, শান্তি প্রিয় সমাজ, ফলাফল সমাধান ও পূণর্গঠন ও পুনর্মিলন
|
৪) জয় নির্ভর
ক) শান্তির প্রতি আলোকপাত না করা , বিভিন্ন চুক্তির ইত্যাদির প্রতি দৃষ্টি দেওয়া
|
নমুনায়ন এলাকাঃ
আমার নির্বাচিত পত্রিকা হচ্ছে কালের কণ্ঠ। কাশ্মীর সংকট নতুন করে এবছরের ৫ আগস্টে শুরু হয়েছে। আমি ৬ আগস্ট থেকে ১৫ আগস্ট এর মধ্যে সাত দিনের পত্রিকা বিশ্লেষণ করেছি।
সংবাদের
বিন্যাসঃ
তারিখ
|
মোট সংবাদ
|
প্রথম পৃষ্ঠা
|
শেষ পৃষ্ঠা
|
ভিতরের পৃষ্ঠা
|
সম্পাদকীয় ও উপস্পাদকীয়
|
০৬ আগস্ট
|
০৪
|
০১
|
০০
|
০৩
|
০০
|
০৭ আগস্ট
|
০৪
|
০১
|
০০
|
০২
|
০১
|
০৮ আগস্ট
|
০২
|
০১
|
০০
|
০১
|
০০
|
০৯ আগস্ট
|
০৪
|
০১
|
০০
|
০৩
|
০০
|
১০ আগস্ট
|
০২
|
০১
|
০০
|
০১
|
০০
|
১১ আগস্ট
|
০৩
|
০১
|
০০
|
০২
|
০০
|
১৫ আগস্ট
|
০১
|
০০
|
০০
|
০১
|
০০
|
মোট
|
০৬
|
০০
|
১৩
|
০১
|
ফলাফল
মোট ফ্রেমিং
|
সংবাদ সংখ্যা
|
শতকরা হার
|
যুদ্ধ সাংবাদিকতা
|
১৩
|
৬৫
|
শান্তি সাংবাদিকতা
|
০৭
|
৩৫
|
মোট
|
২০
|
১০০
|
যুদ্ধ সাংবাদিকতার নিউজ ফ্রেমিং
ক্রমিক নং
|
সংবাদ
|
যে কারণে যুদ্ধ সাংবাদিকতা
|
০১
|
কাশ্মীর কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণে
|
জয় নির্ভরতা
|
০২
|
অনুচ্ছেদ ৩৫ এঃ কাশ্মীরের জন্য বিশেষ আইন কেন বিতর্কিত
|
প্রচারণা নির্ভরতা
|
০৩
|
ভারতের ভাঙন শুরু হয়ে গেল
|
দ্বন্দ্বের ক্ষেত্র আলোচনা
|
০৪
|
কাশ্মীর বিচ্ছিন্ন
|
যুদ্ধপ্রধান সংবাদ
|
০৫
|
মুসলিম প্রধান কাশ্মীরের স্বকীয়তা বদলানোই লক্ষ্য
|
আধিপত্য চাপিয়ে দেয়া
|
০৬
|
পাকিস্থানে ভারতের রাষ্ট্রদূত বহিষ্কার, বানিজ্যও স্থগিত।
|
যুদ্ধপ্রধান সংবাদ
|
০৭
|
কেন্দ্রের শাসনে কাশ্মীর
বিশাল ঝুকি নিয়েছেন মোদি
|
এলিট নির্ভরতা
|
০৮
|
৩৭০ অনুচ্ছেদ সন্ত্রাস ছাড়া আর কিছু দেয় নি:মোদি
|
এলিট নির্ভরতা
|
০৯
|
দোকান -বাজার-এটিএম বন্ধ, প্রতিবাদে কাঁদানে গ্যাস
|
যুদ্ধপ্রধান সংবাদ
|
১০
|
ভারত সরকারের পদক্ষেপ নতুন কিছু না
|
এলিট নির্ভরতা
|
১১
|
সামরিক পদক্ষেপের কথা ভাবছে না পাকিস্থান
কড়া নজরদারির মধ্যে জুমার নামাজ আদায় কাশ্মীরে,বন্ধ ছিল শ্রীনগরের প্রধান মসজিদ
|
দায়সারা সংবাদ, গভীরতা নেই
|
১২
|
কাশ্মীর দ্বিখণ্ডিত হচ্ছে বল্লভভাইয়ের জন্মদিনে।
|
বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনের আখ্যা
|
১৩
|
মোদির প্রশংসায় বেয়ার গ্রিলস
সংকটেও একেবারে শান্ত থাকেন
|
এলিট নির্ভরতা
|
শান্তি সাংবাদিকতার নিউজ ফ্রেমিং
ক্রমিক নং
|
সংবাদ
|
যে কারণে শান্তি সাংবাদিকতা
|
০১
|
কাশ্মীর ইস্যুতে ট্রামই মধ্যস্ততা করবেন
|
সমাধানের আশ্বাস, শান্তির বাণী
|
০২
|
বিশেষ মর্যাদা বাতিলের বিষয়ে কিছু কথা
|
মানবিকতা ও শান্তি
|
০৩
|
উৎকন্ঠায় পাকিস্থানি কাশ্মীরের শরনার্থীরা
|
জনভোগান্তি, কণ্ঠহীনকে কণ্ঠ দান
|
০৪
|
কাশ্মীরের শিশুদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন মালালা
|
শিশুদের ভোগান্তি ও উদ্বেগ
|
০৫
|
পাকিস্তান বিশ্বকে উদ্বেগজনক চিত্র দেখাতে চায়ঃ ভারত
|
গণভোগান্তি, নিরাপত্তা, মানবিকতা
|
০৬
|
কাশ্মীরের ৫ জেলায় ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার
|
নিরাপত্তা, আতঙ্ক হ্রাস
|
০৭
|
কাশ্মীর বিষয়ে নিরাপত্তা পরিষদে জরুরি বৈঠক চান পাকিস্তান
|
সমাধান ও জনভোগান্তি
|
যুদ্ধ সাংবাদিকতায় গালথুং এর মডেল
যুদ্ধ সাংবাদিকতা
|
সংবাদ সংখ্যা
|
শতকরা হার (%)
|
যুদ্ধ নির্ভর
|
০৬
|
৩০
|
প্রচারণা নির্ভর
|
০১
|
৫
|
অভিজাত নির্ভর
|
০৪
|
২০
|
জয় নির্ভর
|
০২
|
১০
|
শান্তি সাংবাদিকতায় গালথুং এর মডেল
শান্তি সাংবাদিকতা
|
সংবাদ সংখ্যা
|
শতকরা হার (%)
|
শান্তি বা দ্বন্দ সম্পর্কিত
|
০১
|
৫
|
সত্য নির্ভর
|
০১
|
৫
|
জনগণ নির্ভর
|
০৩
|
১৫
|
সমাধান নির্ভর
|
০২
|
১০
|
তথ্যপুঞ্জি
ডয়েচে
বাংলা ( ১৫ আগস্ট, ২০১৯)
দৈনিক
কালের কণ্ঠ ( ১১ আগস্ট, ২০১৯)
ভোরের
কাগজ (১০ আগস্ট ২০১৯)
available: https://www.bhorerkagoj.com/print-edition/2019/08/10/265337.php
No comments