বাংলা সংস্কৃতিতে ভূত

ভূত! ভূত কি আছে? এ নিয়ে বিতর্ক আদিকাল থেকেই সভ্যতার শুরু থেকেই মানুষ এ তত্ত্ব নিয়ে মাথা ঘামিয়েছে এ বিতর্ক এখনো চলছে যদিও যুক্তিবাদী বিজ্ঞানমনস্করা সর্বদায় ভূতের অস্তিত্তে সন্দেহ প্রকাশ করেছে
এখনো বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন দেশে ও সংস্কৃতিতে ভূতের বিশ্বাস রয়েছেসাধরণ মানুষ থেকে শুরু করে বিভিন্ন উচ্চ পর্যায়ের মানুষও ভূতে বিশ্বাস করেন যেমন সুইডেনের রাণী সিলডিয়া বিবিসির সাথে এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন- তিনি বিশ্বাস করেন যে, সুইডেনের রাজপ্রাসাদে ভূত আছে(৯ জানুয়ারি,২০১৭, বিবিসি বাংলা)



বাংলা সংস্কৃতি এর ব্যতিক্রম নয়বরং বাংলা সংস্কৃতিতে ভূতের উপস্থিতি আরো জোরালোবাংলা লোকসাহিত্যে ভূত একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। পুরাতন এবং নতুন উভয় বাংলা রূপকথায় প্রায়ই ভূতের ধারণা ব্যবহার করা হয়। আধুনিক বাংলা সাহিত্যেও ভূতের উদাহরণ পাওয়া যায়। বিশ্বাস করা হয়, ভূত হল সেই সব অশরীরি আত্মা যারা জীবিত অবস্থায় শান্তি খুঁজে পায়নি বা অপঘাতে মারা গেছে যেমন খুন,আত্মহত্যা বা দুর্ঘটনা।এছাড়া অন্যান্য জীবজন্তুও মৃত্যুর পর ভূত হতে পারে।  

বাংলা সংস্কৃতিতে ভূতের বিশ্বাস গ্রামীণ কম শিক্ষিত বা অশিক্ষিত লোকদের মধ্যেই বেশি। বিশেষকরে নারীদের মধ্যে এ প্রবণতা বেশি।ভূত নিয়ে নারীদের মধ্যে নানা মুখরোচক গল্প রয়েছে। এমনিভাবে শিশুদের মধ্যেও ভূতের বিশ্বাস খুব প্রকোপ। এজন্য বাবা-মা বা পরিবার অনেকটাই দায়ী। গ্রামে হারিকেনের আলোয় নানী-দাদীর শাড়ির আঁচল ধরে আতঙ্কে নীল হওয়া সেসব গল্প শুনে দিন রাত কাটেনি এমন মানুষ পাওয়া যাবে না। ফলে শিশুকাল থেকেই মানুষের কল্পনার সঙ্গে জড়িয়ে যায় ভূত।  এখনকার ডিজিটাল আমলে ভূতের আধুনিকীকরণ হয়েছে। ভূত উঠে এসেছে বইয়ের পাতায়, সিনেমার সেলুলয়েডে।বই কিনতে গেলে ভূতের বইটা আগে কেনা চাই!  তা সে বড় হোক বা ছোট।

ধর্মভেদে এই বিশ্বাসে ভিন্নতা লক্ষ্য করা যায়। যেমন মুসলমানরা বিশ্বাস করে ভূত বলতে কিছু নেই। তবে জীন আছে।
 বর্তমান অধিকাংশ শিক্ষিত তরুণরা ভূতে বিশ্বাস করেন না। তবে  ভূতের ভয়ে বুক কাঁপেনি এমন মানুষ কমই পাওয়া যাবে। রাতে সুনসান জায়গায় অতি সাহসী মানুষেরও বুক দুরুদুরু করে। গাছের পাতার খস খস শব্দ, আলোছায়ার দোলা শরীরে রক্ত হিম করা অনুভূতি ছড়িয়ে দেয়। গ্রামের পথে বট গাছের নিচ দিয়ে যাবার সময় বুক ধড়ফড় করে। দোয়া দরুদ পড়ে বুকে ফুঁ দিতে ভুল হয় না। যুক্তি বলে ভূত নেই। কিন্তু মন তো সে কথা মানতেই চায় না। অর্থাৎ বিজ্ঞান সব সময়ে বলে আসছে—ভূত বলে কিছু নেই। কিন্তু মানুষের জীবন থেকে এই চরিত্রকে আলাদা করা যায় নামানুষের চিরন্তন আগ্রহ আর রহস্যময়তার কারণে ভূতের ‘জনপ্রিয়তা’ কখনোই কমেনি।



No comments

Powered by Blogger.