বাংলা চলচ্চিত্র ,রেডিও ও টেলিভিশনে ভূত


চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রিগুলোর সিনেমার ক্যাটাগরির মধ্যে হরর মুভি বা ভূতের সিনেমা অন্যতম   হরর মুভি সবচেয়ে বেশি  নির্মিত হয় হলিউডে 



ভূত নিয়ে পৃথিবীজুড়ে বিভিন্ন ভাষায় তৈরি হয়েছে চলচ্চিত্র। এসব চলচ্চিত্রের আবার কোনোটা ভয়ের, কোনোটা হাসির।  কার্টুন সিরিজ ড্যানি ফ্যান্টম, ঘোস্ট ট্র্যাকার্স, স্কুবি ডু, ট্রুথ অর স্কেয়ার ও মিস্ট্রি হান্টার্স-এর কাহিনি গড়ে উঠেছে ভূতকে কেন্দ্র করে। টম অ্যান্ড জেরিতেও একটি ভূতের পর্ব রয়েছে। যেখানে ভূত দেখে টম ভয়ে কাঁপতে থাকে, আর সেই ভূতের সঙ্গে জেরির সখ্য গড়ে ওঠে।  খুব পছন্দের ‘হ্যারিপটার’ সিরিজের গল্পও গড়ে উঠেছে ভূতকে নিয়ে।
 
বাংলা ক্লাসিক সিনেমার মধ্যে ভূতের সিনেমা বা হরর মুভি খুবই কম।তবে সাদাকালোর সময়েও কয়েকটা সিনেমা  বেশ জনপ্রিয় হয়েছিল, যেমন- কংকাল(১৯৫০),হানাবাড়ি(১৯৫২),মনিহারা তিন কন্যা(১৯৬১),কুহেলি(১৯৭১)।
বর্তমান অনেক সিনেমায় ভূতকে বন্ধু ভাবাপন্ন বা কৌতুক পদ রূপে উপস্থাপন করা হয়েছে। যেমন গোপী গাইন বাঘা বাইন সিনেমাতে সত্যজিৎ রায় ভূতকে বা অশরীরী ক্ষমতাকে কমিক রূপে উপস্থাপন করেছেন।
পরিমল পরিচালিত ‘নিশি তৃষ্ণা(১৯৮৯)’ বাংলা চলচিচত্রের প্রথম ভ্যাম্পায়ার সিনেমা। ‘পুতুলের প্রতিশোধ’ ও ‘যেখানে ভূতের ভয়’ সিনেমাগুলোও বাঙালি ভূতের গল্পের উপর ভিত্তি করে নির্মিত হয়েছে।
সত্যজিৎ রায় পরিচালিত ‘অনাথ বাবুর ভয়’,’ব্রাউন সাহেবের বাড়ি’ উল্লেখ যোগ্য ভূতের সিনেমা।এছাড়া সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে আলোচিত সিনেমা হচ্ছে ‘ভূতের ভবিষ্যৎ’ ও ‘গয়নার বক্স’।

 ভূতের ভবিষ্যৎ ভারতীয় পরিচালক অনীক দত্তের পরিচালিত প্রথম বাংলা চলচ্চিত্র। ২০১২ সালের একটি হিট ছবি। নবীন পরিচালক শুটিং এর জন্যে লোকেশন দেখতে আসেন একটি পরিত্যক্ত বাড়িতে। হঠাৎ তার আলাপ হয় বাড়িরই একজন ব্যক্তির সংগে যিনি নাকি ওখানেই থাকেন। তার কাছে থেকে সেই বাড়িতে থাকা কতিপয় ভুতেদের কাহিনী শোনেন পরিচালক। যে গল্পের উপজীব্য বিষয় হল প্রমোটারি আর দখলদারীর ভিড়ে পুরোনো ভুতেরা কিভাবে স্বার্থান্বেষী মানুষদের সাথে লড়াই করে বাড়ির অধিকার অর্জন করলো। তারা প্রথমে আস্তানার খোঁজে আসে পরিত্যক্ত চৌধুরী বাড়িতে। সকলেই অপঘাতে মারা গেছিল। র‍্যামসে সাহেব এবং রায় বাহাদুর এই দুজনে বাড়ির কর্তা হিসেবে থাকতে দেন বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা জাতি, ধর্ম, পেশা, লিঙ্গ নির্বিশেষে ভুতেদের। একসময় প্রমোটারী চক্র বাড়ি দখল করতে এলে তারা বাধা দেয়। একাজে বিভিন্ন পেশার ভুতেরা একযোগে মতলব কষে হটিয়ে দেয় অসাধু ব্যবসায়ীদের। গল্পের শেষে জানা যায় যিনি এর কথক তিনিও একজন ভুত এবং বাকিদের সাথী। শেষ পর্যন্ত পরিচালক তন্দ্রা ভেঙে দেখেন পুরোটাই স্বপ্ন, কিন্তু যা দিয়ে তৈরী হতে পারে ভুতের ভবিষ্যৎ এর মত সিনেমা।

একসময় এদেশে রেডিও ছিল অত্যন্ত জনপ্রিয় গণমাধ্যম।গতানুগতিক ‘বস্তাপঁচা’ আধেয় এবং ৯০’র দশকের পর ঘরে ঘরে টেলিভিশন ও স্যাটেলাইট চ্যানেলের প্রবেশ এর ফলে যেটা হলো, এদেশের বেশিরভাগ মানুষ রেডিও শোনা প্রায় ভুলেই গেল।কিন্তু কীভাবে যেন একবিংশ শতাব্দীর শুরুতে এসে অনেকেই আবার রেডিও’র শ্রোতা হয়ে উঠলেন। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকার বাসিন্দাদের কাছে রেডিও হয়ে উঠল নতুন এক সম্প্রচার মাধ্যম। তবে এই রেডিও আগেকার সেই এএম রেডিও নয়; নতুন প্রযুক্তি এফএম রেডিও আর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে মোবাইল ফোন।
তখন এফ এম রেডিওগুলো তাদের অনুষ্ঠানে ভূতের গল্প যুক্ত করে। এটি প্রথম শুরু করে রেডিও ফুর্তি। এর জনপ্রিয়তা দেখে পরে অনেকেই শুরু করেছে।ভূত এফ,এম এর মতো আরও যে প্রোগামগুলি আছে তা হলোঃ-
১. ডর (এবিসি রেডিও তে)
২.কুয়াশা (এবিসি রেডিও )
৩.হরর সেগমেন্ট( রেডিও আমার)
৪.ভূত ভংয়কর
৫. মধ্যে রাতের ট্রেন,একুশে টিভি।(টেলিভিশন এর  ক্ষেত্রে বাংলাদেশের মানুষ অধিকাংশই ভারতীয় চ্যানেলগুলো দেখে থাকেন।  
৬.ছায়া (রেডিও আমার)

  ই-মেইলেই নয়, অনেকেই অতিথি হয়ে এসে  নানা ঘটনা সরাসরি ভূত এফএম এ অন্য শ্রোতাদের কাছে বর্ণনা করেন।  তাদের ভূত-বিষয়ক স্পেশাল টিমও রয়েছে। যারা ভূত-বিষয়ক তথ্য সংগ্রহ করে তা প্রচার করে। আর অনুষ্ঠান চলাকালীন ভৌতিক পরিবেশ সৃষ্টির জন্য ভৌতিক ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ব্যবহার করে থাকেন। খুব আত্নবিশ্বাসী হয়ে ও গুরুত্ব সহকারে উপস্থাপক অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন।এই অনুষ্ঠানগুলোর একটি প্রধান দাবি হলো- ভূত-পেত্নী আছে। এর মধ্যে দিয়ে তরুণ প্রজন্মকে কুসংস্কারে বিশ্বাসী করানো হচ্ছে। খেয়াল করলে  দেখবেন যে, এই অনুষ্ঠানের অধিকাংশ শ্রোতাই তরুণ। এদের অনেকেই হয়ত এই অনুষ্ঠান শুরুর আগে এ  ধরনের কুসংস্কারে বিশ্বাসী ছিলেন না। কিন্তু প্রতিনিয়ত এই অনুষ্ঠান শোনার ফলে তাদের মধ্যে একধরনের বিশ্বাস জন্ম নিয়েছে।



No comments

Powered by Blogger.